জলচক্র কাকে বলে? গুরুত্ব কি? ৫ টি ধাপ

উত্তর রয়েছে: জলচক্র কাকে বলে ? জলচক্রের গুরুত্ব কি? জলচক্রের ৫ টি ধাপ কি কি? জলচক্র টিকা এবং .জলচক্র সম্বন্ধিত কিছু ইম্পরট্যান্ট MCQ question।

শেষ অব্দি আর্টিকেলটি পড়ো জলচক্র সমন্বিত প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর এই আর্টিকেল দ্বারা পেয়ে যাবে।

জলচক্র কাকে বলে ? 

সূর্যের প্রবল তাপে বিভিন্ন জলাশয় যেমন- নদী-নালা, পুকুর, সমুদ্র, সাগর ইত্যাদি থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে যায় এবং মেঘ রূপে আকাশে ভেসে বেড়ায়। এই ভাসমান কণা গুলি একত্রিত হয়ে ঘনীভূত হওয়ায় কণা গুলি ভারী হয়ে যায়।

আকাশে আর ভেসে থাকতে পারে না, ফলে কনা গুলি বৃষ্টি কিংবা তুষার রূপে পৃথিবীতে ঝরে পড়ে। আবার সেই বৃষ্টির জল কোনো না কোনো ভাবে পুকুর, সমুদ্র, নদী ইত্যাদি জলাশয় তে গিয়ে মিশে যায় এবং পুনরায় বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে যায়।

এইভাবে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর জলরাশি বারিমন্ডল থেকে বায়ুমণ্ডল এবং বায়ুমণ্ডল থেকে পুনরায় শিলামন্ডল ও বারিমন্ডলে চক্রাকারে আবর্তিত হতে থাকে এই চক্রাকারে আবর্তন পদ্ধতি কেই জলচক্র বলে। 

জলচক্র চিত্র
জলচক্র চিত্র

জলচক্রের গুরুত্ব কি

পৃথিবীতে যে জীবমণ্ডল সৃষ্টি হয়েছে সেখানে জলচক্রের অসীম গুরুত্ব রয়েছে। 

পানীয় জলের উৎস 

আমরা জানি যে পাহাড় পর্বত এ যে সকল বরফ গুলি জমে থাকে যেগুলো নদীর মাধ্যেমে সমুদ্রে এসে পৌঁছায়। সমুদ্রে পৌঁছানোর পর সেই জল লবণাক্ত জলে পরিণত হয়ে যায় এবং এই জল পান করার মতো উপযোগী থাকে না। 

তখন আবার এই লবণাক্ত জল সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে মেঘ ও তারপর বৃষ্টির সৃষ্টি করে। আবার বৃষ্টি থাকে বরফ বা তুষার রূপে পার্বত্য অঞ্চলে এসে জমা হয় এবং সেই জমা হওয়া বরফ এর জল কিন্তু তখন আর লবণাক্ত থাকে না তখন সেটি মিষ্টি জলে রূপান্তরিত হয়ে যায়। সেই জল থেকেই আমরা পানীয় জল উৎস পেয়ে থাকি। 

ভূগর্ভের জলের ভারসাম্য রক্ষা  

জলচক্রের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জলের ভারসাম্য বজায় থাকে। যদি জলচক্র না থাকতো তাহলে আমরা যে পরিমাণ জল ভূর্গভ থেকে তুলে নিই সেই জল আর পুনরায় ভূগর্ভে ফিরে যেত না এবং ভূগর্ভের জলের ভারসাম্য বজায় থাকত না ফলে একসময় ভূগর্ভের জল শেষ হয়ে যেত।

কৃষি কাজের উপর প্রভাব

কৃষিকাজ কিন্তু সমুদ্রের লবণাক্ত জল দ্বারা সম্ভব নয়,  কৃষিকাজ করতে মিষ্টি জল লেগে থাকে। সেক্ষেত্রে যে সকল অগভীর পুকুর রয়েছে সেখান থেকে মিষ্টি জল এর সঞ্চয় করা হয় এবং এই পুকুর এর মিষ্টি জলের প্রধান উৎস হচ্ছে বৃষ্টির জল। 

এবং বৃষ্টির সৃষ্টি হয় জলচক্রের মাধ্যমে। জলচক্র না থাকলে কিন্তু বৃষ্টি হতো না। এছাড়াও কৃষিকাজ নদীর জলের উপরেও অনেকটাই নির্ভরশীল। নদীর জল এর সাহায্যে খাল কেটে চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। নদীর জলের প্রধান উৎস হলো পাহাড়ের বরফ গলা জল কিংবা বৃষ্টির জল। 

বৃষ্টিপাত

আমাদের ভারতবর্ষ হলো একটি কৃষি প্রধান দেশ। এবং কৃষি কাজের ক্ষেত্রে বৃষ্টি খুবই গুরুতবপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই বৃষ্টি পুরোটাই কিন্তু জলচক্রের উপর নির্ভরশিল। কারণ জলচক্র না থাকলে জল বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠত না এবং বৃষ্টিপাত হতো না। 

ভারতবর্ষের মত যে সকল দেশ গুলি রয়েছে অর্থাৎ কৃষি প্রধান দেশ সেখানে কৃষি কাজ সম্পন্ন হতো না এবং সেখানকার মানুষদের পক্ষে বেছে থাকা দুর্বিষহ হয়ে পড়ত। 

এইভাবেই জলচক্র পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে।

জলচক্রের ৫ টি ধাপ কি কি ? 

জলচক্রের ৫ টি ধাপ হল বাষ্পীভবন→ ঘনীভবন→ মেঘ →তুষার রূপে সঞ্চয় এবং বৃষ্টি রূপে অধঃক্ষেপণ

জলচক্রের ৫ টি ধাপ
জলচক্রের ৫ টি ধাপ

ভূপৃষ্ঠে, সাগর মহাসাগর এবং বায়ুমণ্ডলে পৃথিবীর বিপুল পরিমাণ জলরাশি জলচক্রের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পক্রিয়ায় আবর্তন হচ্ছে। জলচক্র তার এই অবর্তন পদ্ধতিটির মাধ্যমে পৃথিবীর জিবমন্ডল সহ আরো নানান কাজে গুরুত্ব পূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। জলচক্র না থাকলে পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় থাকা সম্ভব হতো না। জলচক্রের এই আবর্তন পদ্ধতিটি 5 টি ধাপ এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। জলচক্রের এইও ৫ টি ধাপ গুলি হলো নিম্নলিখিত – 

  1. সবার প্রথমে সকল জলাশয় অর্থাৎ পুকুর, নদী, নালা, সমুদ্র, সাগর, মহাসাগর এবং হ্রদ ইত্যাদি থেকে সেখান কর জল সূর্যের প্রখর তাপে বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে যায়। 
  2. বাষ্পীভূত হওয়ার পর যেই জলকণা গুলি ধূলিকণা কে আশ্রয় করে মেঘ এর সৃষ্টি করে। 
  3. মেঘে ভাসমান সেই ধূলিকণা গুলি একত্রিত হয়ে ঘনীভূত হয়ে এলে সেগুলি ক্রমশ ভারী হতে থাকে এবং আর ভেসে বেড়াতে পারে না। 
  4. এরপর সেই ভারী কনা গুলি পৃথিবীর বুকে বৃষ্টি বা তুষার রূপে ঝরে পড়ে।
  5. সেই বৃষ্টি বা তুষারের জল গুলি আবার পুনরায় নদী বা সমুদ্রে গিয়ে মেশে। এবং ধীরে ধীরে সেই জল সাগর মহাসাগর আরো নানান জলাশয়ে গিয়ে সঞ্চিত হয় এবং পুনরায় বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে যায়। 

 এইভাবে এই 5 টি ধাপ বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জলচক্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। 

জলচক্রে বাস্পিভবন, ঘনিভবন ও অধঃক্ষেপন এর প্রভাব :- 

  • বাস্পিভবন- বাস্পিভবন হচ্ছে তরল থেকে বাস্পে রূপান্তরিত হওয়ার পদ্ধতি। অর্থাৎ কোনো তরল পদার্থের উপর শুধু মাত্র তাপ প্রয়োগ করে সেই তরল পদার্থ কে যখন বস্পে রূপান্তর করা হয় তখন তাকে বাস্পিভবন বলে। 

জলচক্রের ক্ষেত্রে সূর্যের তাপ দ্বারা সুমদ্র, সাগর, মহাসাগর ইত্যাদি থেকে জল বাষ্পীভূত হয়, যার ফলে এই বাস্পিভবন প্রক্রিয়া টি সম্পন্ন হয়ে থাকে।  

  • ঘণিভবন- বাষ্পীভূত জলকণা যখন ঠান্ডা বায়ুর সংস্পর্শে এসে শীতল হয়ে যায় এবং তরলে পরিনত হয় তখন তাকে ঘনিভবণ বলে। 

জলচক্রের ক্ষেত্রে যখন সূর্যের তাপে জল বাষ্প হয়ে উপরে উঠে যায় এবং ধীরে ধীরে ঠান্ডা বায়ুর সংস্পর্শে আসে, ধূলীকণার আশ্রয় নিয়ে প্রথমে মেঘ ও ওই মেঘ থেকে লীনতাপ বের করে ঠান্ডা হতে থাকে এবং একসময় তরল রূপে পরিণত হয়। 

  • অধঃক্ষেপণ – আকাশে বা বায়ুমণ্ডল এ ভেসে থাকা জলীয় বাষ্প গুলি একত্রিত কিংবা ঘনীভূত হয়ে আসলে তখন তারা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে পৃথিবীর উপর এসে পড়ে এই ঘটনাকেই বৃষ্টিপাত কিংবা অধঃক্ষেপণ বলা হয়ে থাকে। 

জলচক্রের ক্ষেত্রে আকাশে ভেসে থাকা জলকণা গুলি যখন একত্রিত হয়ে ঘনীভূত হতে থাকে তখন ভারী হয়ে যাওয়ার ফলে সেগুলি আর ভেসে থাকতে পারে না এবং তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে জলকণা গুলি বৃষ্টি কিংবা তুষার রূপে পৃথিবীতে ঝরে পড়ে।

টিকা লেখ – জলচক্র

সূর্যের তাপে সকল নদ নদী, সমুদ্র, হ্রদ ইত্যাদি জলাশয় থেকে জল বাষ্প হয়ে বাতাসে মেশে, সেই বাষ্প কে জলীয় বাষ্প বলে। জলীয় বাষ্প বাতাসের থেকে হালকা হয়। এর ফলে জলীয় বাষ্প উপরের দিকে উঠে যায়। 

উপরের বায়ুর স্তর গুলো ঠান্ডা হয়ে থাকে, ফলে জলীয় বাষ্প গুলি সেই ঠান্ডা বায়ুর সংস্পর্শে এসে ঠান্ডা হয়ে পড়ে। তখন সেই জলীয় বাষ্প গুলি জলকণায় পরিণত হয়। এরপর জলকণা গুলি ধূলিকণা কে আশ্রয় করে মেঘ হয়ে আকাশে ভেসে বেড়ায়। 

অনেকগুলি জলকণা যখন একত্রিত হয়ে একটি বড় জলকনার সৃষ্টি করে। সেই জলকণা গুলি আরো উপরে উঠলে সেখানকার ঠান্ডা বায়ুর সংস্পর্শে এসে বরফ কনায় পরিণত হয়। তখন সেই বরফ কনা গুলি বাতাসের থেকে ভারী হয়ে যাওয়ায় আর ভেসে থাকতে পারে না। 

ফলে বৃষ্টি বা তুষার রূপে পৃথিবীতে নেমে আসে। সেই বৃষ্টির জল পুনরায় নদী বা সমুদ্রে ফিরে আসে এবং সূর্যের প্রবল তাপের ফলে সেই জল আবার বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে মিশে যায়।

 এইভাবে জল কে আমরা কখনো মেঘ কখনো বরফ বা কখনো বাষ্প রূপে পেয়ে থাকি জলের এই চক্রাকার আবর্তন হল জলচক্র। এই জলচক্রের মাধ্যমেই জল কে আমরা কঠিন তরল এবং বাষ্প এই তিনটি রূপেই পেয়ে থাকি। 

জলচক্রের চারটি প্রধান প্রক্রিয়া কি কি?

জলচক্রের চারটি প্রধান প্রক্রিয়া হল বাস্পিভবন, ঘনিভবন, অধঃক্ষেপন এবং সংগ্রহ।

জলচক্রের কোন অংশ অভিকর্ষ বল দ্বারা সৃষ্ট হয়?

জলচক্রে অধঃক্ষেপণ প্রক্রিয়াটি অভিকর্ষ বল দ্বারা সৃষ্ট হয়।

জলচক্রের কোন অংশ উষ্ণ অবস্থায় ঘটে?

জলচক্রের বাস্পিভবন প্রক্রিয়াটি অংশ উষ্ণ অবস্থায় ঘটে।

জলচক্র কি class 6 short answer 

জলচক্র class 6 short answer: আমাদের চারপাশে নানান ধরনের জলাশয় রয়েছে, যেমন- পুকুর, সমুদ্র, নদ, নদী ইত্যাদি। এই জলাশয় গুলির উপর যখন সূর্যের আলো পড়ে তখন জল বাষ্প হয়ে উপরে উঠে যায় এবং মেঘ রূপে ভেসে বেড়ায়।

এই মেঘ যখন ঘনীভূত হয়ে ভারী হয়ে যায় তখন আবার বৃষ্টি রূপে পৃথিবীতে নেমে আসে।এই ভাবেই জল থেকে বাষ্প, বাষ্প থেকে মেঘ, মেঘ থেকে বৃষ্টি এবং সেই বৃষ্টির জল আবার সূর্যের তাপে পুনরায় বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে উঠে যায়। এই ঘটনাটি পুরোটাই একটি চক্রের মাধ্যমে আবর্তিত হওয়ায় এটিকে জলচক্র বলে।

জলচক্রের প্রথম ধাপ কোনটি?

জলচক্রের প্রথম ধাপ হল বাষ্পীভবন।

Next:

জলচক্র কাকে বলে ? জলচক্রের গুরুত্ব কি? জলচক্রের ৫ টি ধাপ কি কি? জলচক্র টিকা এই সকল প্রশ্ন উত্তরগুলি তোমাদের সহায়ক হয়ে থাকলে অবশ্যই অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের সাথে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করবে।

Leave a Comment