বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কী

প্রশ্ন: বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কী?- এই গুরুত্বপুর্ন প্রশ্নের উত্তরটি নিচে দেওয়া হলো। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ বলতে কি বঝায় এবং এর প্রোয়োজনীয়তা কী

বৃষ্টির জল সংরক্ষণ বলতে কি বঝায়? 

জলচক্রের মাধ্যমে বৃষ্টির ফলে আমরা নানান প্রক্রিয়া অবলম্বন করে জল সংরক্ষণ করে রাখতে পারি। এবং এই বৃষ্টির জলকে আমাদের দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি। এই পদ্ধতি টিকে Rain water Harvesting বা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ বলা হয়। 

বৃষ্টির সময় আমাদের ছাদের উপরে যতটা জল সংরক্ষিত হয়ে থাকে, সেই জল কে আমরা সংরক্ষণ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার দ্বারা পরিশুদ্ধ করার পর ব্যবহার করা যেতে পারে। 

বর্তমান পরিবেশে আমাদের সমাজ এতটাই দূষিত হতে থাকছে যে তার ফলে এখন বিশুদ্ধ জল পাওয়া খুবই মুশকিল হয়ে পড়েছে। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে বৃষ্টির জল কিন্তু খুবই পরিশুদ্ধ এবং গুণগত মানের। কিন্তু আমরা এই জল কে অনায়াসে নষ্ট করে দিচ্ছি। 

বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কী :- 

বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা গুলি হল নিম্নরূপ-

  1. পৃথিবীর মোট 3 টি ভাগ নিয়ে গঠিত। তার মধ্যে 2 ভাগ হলো জলভাগ এবং 1 ভাগ হলো স্থলভাগ। এই দুই ভাগ জল এর মধ্যে বিপুল পরিমাণ জলরাশি আছে। 2 ভাগ জলের মধ্যে প্রায় 97.5 % জল হলো লবণাক্ত জল এবং বাকি যে 2.5% জল আছে সেটি হলো মিষ্টি জল।
  2.  এর পরেও  এই 2.5% জল এর মধ্যেও আবার 1.9% জল আমাদের জন্য যোগ্য নয় অর্থাৎ এগুলি হিমবাহ, তুষার আচ্ছাদন এর মাধ্যমে বাহির হতে থাকে। এরপর সবার শেষে বেছে থাকে 0.6% জল এই জল টিই কেবলমাত্র আমাদের জন্য উপযুক্ত।
  3.  তাহলে বঝায় যাচ্ছে আমাদের প্রাপ্য জলের পরিমাণ অনেকটাই কম। এই মিষ্টি জল অর্থাৎ 1.9 % জল এর মধ্যেও আবার বেশির ভাগটাই আমাদের ভূপৃষ্ঠের নিচে একুইফার  আছে। এবং বাকি পরিমাণ জল ভূপৃষ্ঠের সমস্ত নদী এবং হ্রদ এর মাধ্যমে বয়ে চলেছে। 
  4. সুতরাং আমাদের ব্যবহার করার উপযুক্ত জলের পুরোটাই আধুনিক পদ্ধতিতে মাটির খনন কার্য এবং মাটির নিচের জলের উপর নির্ভর করে। মাটির নিচের এর স্বল্প পরিমাণ জলের কথা মাথায় রেখে  আমাদের উচিত বিভিন্ন কৃত্রিম উপায়ে এর মাধ্যমে জলাশয় ও হৃদ তৈরি করা। এবং এই জলাশয় ও হ্রদ গুলির মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কার্য গুলি সম্পন্ন করা। 
  5. এই স্বল্প পরিমাণ মিষ্টি জল প্রধানত তিনটি কাজে ব্যবহার করা হয় – গৃহস্থের কাজে, কৃষি জমিতে, শিল্প ক্ষেত্রে। গৃহস্থের ক্ষেত্রে সবথেকে কম পরিমাণ মিষ্টি জল ব্যাবহার করা হয়। তারপর শিল্প ক্ষেত্রে গৃহস্থের তুলনায় বেশি পরিমাণে মিষ্টি জল ব্যবহার করা হয়। 
  6. এবং সবথেকে বেশি পরিমাণে মিষ্টি জল ব্যবহার করা হয় কৃষিক্ষেত্রে। উল্লেখযোগ্য ভাবে বলা যায় যে আমরা গৃহস্থ এবং শিল্প ক্ষেত্রে যে পরিমাণ মিষ্টি জল ব্যবহার করি তার বেশিরভাগটাই মিষ্টি জলের উৎস ক্ষেত্রে ফিরে যায় সেক্ষেত্রে জলের কোনো অপচয় হয় না। 
  7. কিন্তু আমরা কৃষি ক্ষেত্রে যে জল ব্যবহার করি তার পুরোটাই অপচয় হয় অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে পুরো জল তাই বাষ্পীভূত হয়ে যায়। এর পরেও এশিয়া মহাদেশের সমস্ত রাষ্ট্র গুলি নিজেদের স্বার্থের জন্যে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে এবং অতিমাত্রায় মাটির নিচ থেকে ক্রমশ জল নিষ্কাশন করে চলেছে। তাই শুধু কৃষি ক্ষেত্রে নয় গৃহস্থ এবং শিল্প ক্ষেত্রে ও জলের চাহিদা ক্রমশ বাড়তে থাকছে। 
  8. ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ বর্তমানে খুবই স্বল্প পরিমাণ থাকা সত্ত্বেও মানুষের ভূপৃষ্ঠের জলের থেকে ভু- গর্ভস্থ জল এর চাহিদা অনেক বেশি। ভূপৃষ্ঠ জলের পরিমাণ এত কম থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টির অধঃক্ষেপন এর দ্বারা আবার ভূপৃষ্ঠ জলের পরিমাণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হতে পারে।
  9.  কিন্তু তানাহলে আর কখনো কোনো উপায়ে ভূগর্ভের জলের সঞ্চয় মেটানো সম্ভব হবে না। এবার এই অবস্থাতে ভূগর্ভের জলের মধ্যে অতি মাত্রায় দূষণ, বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, জৈব ও অজৈব পদার্থ এবং সংক্রামক জীবাণু থাকার ফলে ভূগর্ভের জল দূষিত হয়ে থাকছে এবং এর জন্যেই ভূগর্ভের জল এর পরিমাণও কমতে থাকছে।
  10.  যদি এই পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে এক অভাবনীয় পরিবেশ সমস্যার সৃত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এবার সবার শেষে বলা যায় আগত ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের ভূগর্ভস্থ জল এবং বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে রাখা অতি জরুরি। 

বর্ষা কালীন সময়ে আমরা যতটা সম্ভব বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে রাখতে পারি। সেই জল কে আমরা শুদ্ধ করে ব্যবহার করতে পারি এবং বাকি জল সঞ্চয় করতে পারি। যার ফলে আমাদের ভৌমজল এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এই সঞ্চয় কার্যের ফলে শুষ্ক বা গ্রীষ্ম ঋতুতে আমাদের জলের চাহিদাও পূরণ হতে পারে। 

প্রশ্ন: বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কী?

বৃষ্টির জল সংরক্ষণের পদ্ধতি :- 

  1. একটি জমিতে আড়াআড়ি ভাবে ফসল করলে বৃষ্টির জল তাড়াতাড়ি অপসারিত হতে পারবে না। তার ফলে সেই জল ভাটির ভিতরে প্রবেশ করবে।  
  2. বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেলে আগে থেকে মাটি কর্ষণ করে রাখা ভালো। এর ফলে মাটির জল রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  3. জমিতে এমন কোনো ডাল শস্য চাষ করা উচিত যেগুলির শিকড় মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত যেতে পারে। এর ফলে বৃষ্টি হলে বৃষ্টির ফোটার মাধ্যমে মাটি ক্ষয় ও কম হবে এবং বৃষ্টির জল মাটির গভীরে যেতে পারবে।

জল হলো প্রকৃতির একটি দান। পৃথিবীতে শুদ্ধ জলের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস হতে থাকছে। মানব জাতির জন্যে জলাশয়ের জল এবং ভৌমজল হলো পানিও জল এর একমাত্র উৎস। এবং জল চক্রের মাধ্যমে বৃষ্টি রূপে যে জল আমরা পেয়ে থাকি তার অধিকাংশ শুদ্ধ জলের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

বৃষ্টিপাতের ফলে যতটা পরিমাণ জল ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে তার তুলনায় খুব কম অংশ জল অনুস্রাবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভৌমজল এর মধ্যে সঞ্চিত হয়। এবং বাকি অধিকাংশ জল বারবার বৃষ্টি রূপে পতিত হয় নদী, নালা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রবাহিত হতে হতে সাগরে গিয়ে পৌঁছায়।

যার ফলে সেই জল আমাদের ব্যাবহার এর উপযুক্ত থাকে না। এবং এই সমস্ত সমস্যা গুলির ফলেই আমাদের বাস্তব জীবনে শুদ্ধ জলের  চাহিদা এত বেশি। এই চাহিদা মেটানোর খুবি সহজ একটি পদ্ধতি হলো বৃষ্টির জল সংরক্ষণ।

উপোরক্ত অংশে এই বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কী– প্রশ্নের উত্তরটি আশা রাখি আপনাদের সঠিক ভাবে নোট সহকারে দিতে সক্ষম হয়েছি। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন-বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কী।

অন্যান্য পোস্ট-

Leave a Comment