পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনাটি অভিজ্ঞ শিক্ষিকা দ্বারা রচিত হয়েছে। পরিবেশের উন্নয়নে ছাত্র ছাত্রীদের ভূমিকা রচনাটি একটু বিস্তারিতভাবে লেখা হয়েছে তোমরা প্রয়োজন মত কিছু কিছু প্যারাগ্রাফ বাদ দিয়ে পড়তে পারো।
প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী তোমাদের জন্য এই পরিবেশে সুরক্ষায় ছাত্রসমাজেরভূমিকা রচনাটির PDF টি দেওয়া হয়েছে যা তোমরা নিচে দেওয়া লিঙ্ক থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।
Table of Contents
পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা
শিক্ষা আমাদের জীবনের এক মহা মূল্যবান সম্পদ। শিক্ষায় আমাদের মানুষ হতে সাহায্য করে। বিদ্যা তথা জ্ঞান অর্জন এক ধরনের তপস্যা। এই শিক্ষার জন্যই আমরা ছাত্র বা ছাত্রী হয়ে উঠি।
এই ছাত্র জীবনে শিক্ষা অর্জন করার সাথে সাথে সদাচার করা, পরিচ্ছন্ন থাকা, সকলকে ভালোবাসা, নিজেদের স্বাস্থ্য রক্ষা করা, পরিবেশ সুরক্ষা করাও আমাদের কর্তব্য হয়ে পড়ে। আমরা এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে বাস করছি।
এই যুগের উন্নয়ন যেমন একধারে মানব কল্যাণকর অন্যধারে মানুষ আর পরিবেশের জন্য অকল্যাণ কর বটে। অকল্যাণকর উন্নত পরিবেশের বেশ ক্ষতিও করছে। তাই স্কুল-কলেজ, সংবাদমাধ্যম, পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা আজ পরিবেশ সুরক্ষায় বেশ তৎপর।
স্কুল-কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে ছাত্র সমাজের উপরেও পরিবেশ রক্ষার গুরুদায়িত্ব এসে পড়েছে। পরিবেশ শিক্ষা ছাত্র এই সবই আজ আমার রচনার বিষয়বস্তু। পরিবেশের সুরক্ষা করা খুবই প্রয়োজন তাই আজকের রচনার নামকরণ করলাম ‘পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা‘।
ভূমিকা
“তোমাদের পথ যদিও কুয়াশাময়,
উদ্দাম জয়যাত্রার পথে জেনো ও কিছুই নয়।”
[সুকান্ত ভট্টাচার্য]
মানুষের চরিত্র গঠনে আর তার ব্যক্তিত্বের বিকাশে পরিবেশের বিরাট প্রভাব থাকে। এক কথায় পরিবেশই তার জীবনের নিয়ন্ত্রণ শক্তি। আজকের ছাত্র সমাজ প্রাণশক্তিতে ভরপুর।
বিদ্যালাভের সাথে তারা দেশ, সমাজ এবং পরিবেশের প্রতি ও দায়িত্বশীল। ছাত্র সমাজ জ্ঞানের আলোয় পরিবেশ ও সমাজকে আলোকিত করছে।
পরিবেশের উন্নয়নমূলক কাজকর্মে তারা ছাপ ফেলছে ও অবদান রেখে দিচ্ছে। আগামী ও বর্তমান দিনে ছাত্র সমাজ জাতির পরিবেশ রক্ষার কাজে সকলের সাথে এগিয়ে আসে তার জন্য পরিবেশকে বিস্তারিতভাবে আলোচনার প্রয়োজন।
পরিবেশ কাকে বলে
“অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।”
শুরু করার আগে পরিবেশ কাকে বলে তা জেনে নেওয়া দরকার আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তার সব মিলিয়েই তৈরি হয় আমাদের পরিবেশ। পরিবেশ কথাটি এসেছে ইংরেজি ‘environment’ শব্দ থেকে।
Environ কথাটির অর্থ হল- ঘিরে থাকা। তাই পরিবেশ কথার সাধারণ অর্থ হলো- যা পরিবেষ্টন করে থাকে।
শিক্ষা বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে, পরিবেশ হল ব্যক্তির চারপাশে অবস্থিত সেই সকল উপাদান, ঘটনা, প্রতিষ্ঠান, মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর সমাবেশ যা কোনো না কোনোভাবে ব্যক্তিকে উদ্দীপ্ত ও প্রভাবিত করে এবং যার দ্বারা তার ব্যক্তিসত্তার বিকাশ নির্ধারিত হয়।
এই পরিবেশ দুই প্রকার-
- একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ
- অপরটি সামাজিক পরিবেশ।
প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ছাত্রসমাজ
প্রকৃতি আপন নিয়মে পৃথিবীতে প্রতিটি জীবনের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যে উপাদানগুলি তৈরি করেছে সেই সমস্ত উপাদান গুলোকে নিয়েই প্রাকৃতিক পরিবেশ হয়েছে। আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রাকৃতিক পরিবেশের আওতায় আসে।
ছাত্র সমাজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য গাছ লাগাচ্ছে। প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার্থে তারা সকলেই এই ধরনের কাজে সাহায্য করছে ও পড়াশোনাও করছে।
সামাজিক পরিবেশ ও ছাত্রসমাজ
পরিবারের সকল সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রতিবেশী, নিয়ম কানুন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি নিয়েই সামাজিক পরিবেশ গঠিত। সামাজিক পরিবেশ সামাজিকীকরণের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির আচার-আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- ছাত্রসমাজ নিয়মিত স্কুল-কলেজের পরিবেশ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- ছাত্র সমাজ নিজেদের বাবা মার সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে সামাজিক পরিবেশকে সুগঠিত করছে।
- ছাত্র সমাজ শিক্ষার আলোয় সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত করছে, এতে সামাজিক পরিবেশ কুসংস্কার মুক্ত হচ্ছে।
পরিবেশ দূষণ
পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলেই পরিবেশ সুরক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশের প্রধান উপাদান হলো- জল, আলো ও বায়ু বা বাতাস। এই তিনটি উপাদানই আজ দূষিত হয়ে পড়ছে।
বিভিন্ন কলকারখানার নোংরা জল ও কেমিক্যাল পদার্থ প্লাস্টিক এই সমস্ত নদী-নালা পুকুরে জলাশয়ে পড়ে জলে খারাপ ব্যাকটেরিয়া জন্ম দিচ্ছে, যা পরিবেশের থাকা গাছপালা মানুষ ও ইত্যাদির জন্য প্রাণঘাতক।
আবার বাস, গাড়ি, বিভিন্ন জ্বালানির ব্যবহারে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি হচ্ছে তার জন্য আমাদের পৃথিবীপৃষ্ঠে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এসে পড়ছে। যা পরিবেশে উপস্থিত প্রত্যেক বস্তু জীব প্রভৃতির জন্য ক্ষতিকারক।
এই অতিবেগুনি রশ্মি ফলে মানুষের চামড়ার ক্যান্সার বেশি পরিমাণে হচ্ছে বা বাড়ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ার জন্য আজ আমাদের বায়ু দূষিত হয়ে পড়ছে। একটু একটু করে আমাদের পরিবেশকে শেষ করে ফেলছে।
বায়ু দূষিত হওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে মানুষের মধ্যে। ধুলোবালির জন্য ফুসফুস জনিত রোগ হচ্ছে।
পরিবেশ রক্ষার্থে ছাত্র সমাজের করণীয়
ছাত্র সমাজ হাতে কলমে যেমন পরিচ্ছন্নতার কাজ করবে তেমনি সশরীরে পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করে জন মানবের মধ্যে সচেতনতার সৃষ্টি করবে। বিজ্ঞাপন, সভা, আলোচনার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় মানুষজনদের জাগরিত করতে হবে।
- ছাত্র সমাজকে আগে নিজেদের বাড়ির পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর করতে হবে। তারপর প্রতিবেশীদের মধ্যে পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে সচেতন করতে হবে। এভাবে সমাজের পরিবেশ সুরক্ষার আদর্শের কথা ছড়িয়ে দিতে হবে।
- পল্লীর নিকাশী ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ি ঘরের আশেপাশে নোংরা জমতে দেওয়া যাবে না। নর্দমা পরিষ্কার রাখতে হবে।
- আবর্জনা ফেলার জন্য পরিবেশের উপযোগী ব্যবস্থা করতে হবে, ছাত্রসমাজকে ছোট বড় দল গঠন করে পরিবেশ সুরক্ষায় চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে।
- টেলিভিশন মোবাইল প্রভৃতির মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
- ধোয়া জাতীয় যানবাহনের পরিমাণ কমিয়ে সাইকেল, ব্যাটারি চালিত যানবাহনের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
- পরিবেশ শত্রু প্লাস্টিক এই ধরনের জিনিস তৈরি বন্ধ করতে হবে কলকারখানার কেমিক্যাল ও ধোঁয়ার পরিমাণ কমাতে হবে।
- রান্নার জন্য গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
- শৌচালয়ের পরিমাণ বাড়াতে হবে। মেডিকেল সাইন্স কে উন্নত করতে হবে।
ছাত্র ছাত্রীদের পাশাপাশি মানুষজনদের এগিয়ে আসতে হবে পরিবেশ রক্ষার কাজে। যাতে করে আমরা একটি সুরক্ষিত পরিবেশ পাই। আগামী প্রজন্ম পৃথিবীতে এলে যেন এক সুন্দর পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আমরা উপহার দিতে পারি তার ব্যবস্থায় তৎপর হতে হবে।
মূল্যায়ন
পরিবেশ যদি দূষিত হয়ে পড়ে তবে জীবদের স্বাভাবিক কাজ গুলো বন্ধ হয়ে যাবে এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পড়বে। এই পরিবেশ দূষণ বর্তমান ভবিষ্যৎ দুই প্রজন্মেরই ক্ষতিসাধন করবে।
তাই ছাত্র সমাজকে উৎসাহমূলক কাজকর্ম দ্বারা পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে, যাতে সকলেই তাদের সাথে মিলিত ভাবে কাজ করে। সরকার, স্কুল -কলেজ বেশ কিছু ভালো ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে পরিবেশ রক্ষার জন্য।
পরিবেশ সুরক্ষায় এই ধরনের আরো ভালো ভালো পদক্ষেপের প্রয়োজন। পরিবেশ সুরক্ষার কাজে ছাত্রসমাজ বেশ দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা নিচ্ছে।
রচনাটির লেখিকা– রিয়া দাস।
____________________________________
পরিবেশের উন্নয়নে ছাত্র ছাত্রীদের ভূমিকা রচনা PDF
পরিবেশের উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা রচনাটির PDF টি নিচে দেওয়া লিঙ্ক থেকে তোমরা ডাউনলোড করে নাও।
Next:
পরিবেশের সুরক্ষায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা রচনাটি আরো অন্যান্য নামেও পরীক্ষায় আসতে পারে। যেমন- পরিবেশ রক্ষার আবশ্যকতা, পরিবেশ ও ছাত্র সমাজ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকা, পরিবেশ পরিষেবায় ছাত্র সমাজ, পরিবেশের উন্নয়নে ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা class 10, class 9, class 12 ইত্যাদি।
হাউস ওয়াইফ, অবসর সময়ে লেখালিখি (M.A in Bengali)