প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের কোথায় রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা আছে? এশিয়ার মধ্যে ভারতের রেল নেটওয়ার্ক হলো সবথেকে বড় রেল নেটওয়ার্ক। এই ভারতের রেল নেটওয়ার্ক থেকে প্রতিদিন প্রায় 13,000 টি ট্রেন যাত্রা করে। এবং এই ট্রেন গুলিতে প্রায় 23 লক্ষ্য মানুষ নিজের কর্ম ক্ষেত্র হোক কিংবা ভ্রমণ বা অন্যান্য কাজে গমন করে থাকে।
আপনিও হয়তো কখনও না কখনও কোনো উদ্দেশ্যে এই ট্রেন এর মাধ্যমে যাতায়াত করেছেন। এই যাত্রা করার সময় আপনার মনে হয়তো কখনও না কখনও এই সকল প্রশ্ন গুলো এসেই থাকবে যে, পশ্চিমবঙ্গের কোথায় রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা আছে? ট্রেনের এই ইঞ্জিন গুলি কোথায় কিভাবে তৈরি করা হয় ? ট্রেনের বগি গুলিই বা কোথায় তৈরি করা হয় ? এগুলি প্রথম সূত্রপাত কোথায় ঘটেছিল ? আরও নানান ধরনের প্রশ্ন।
এই সকল প্রশ্ন গুলির মধ্যে আজ আমরা একটি প্রশ্ন নিতে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো। সেটি হলো পশ্চিমবঙ্গের কোথায় প্রথম রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা অবস্থান করছে ? তাহলে আসুন দেরি না করে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক – পশ্চিমবঙ্গের কোথায় রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা আছে?
পশ্চিমবঙ্গের কোথায় রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা আছে
পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে অবস্থিত চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা হলো পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে প্রথম রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা। চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা বা চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস হলো ভারতের একটি সুপরিচিত ইলেকট্রনিক লোকোমোটিভ তৈরির কারখানা। পুরো বিশ্বে যতগুলি ইলেকট্রনিক লোকোমোটিভ তৈরির কারখানা আছে তাদের মধ্যে চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা হলো অন্যতম।
ভারতে প্রথম রেল ইঞ্জিন কারখানা তৈরি হয় 1943 সালে। টাটা জামশেদপুর এর ‘ টাটা ইঞ্জিন অ্যান্ড লোকোমোটিভ কো ‘ হলো ভারতের মধ্যে প্রথম রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা। এবং তখন থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে রেল ইঞ্জিন তৈরির কাজ একইভাবে চলে আসছে।
এরপর 1950 সালে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা স্থাপন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে আসানসোলের ‘চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস’ হলো প্রথম রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা। এখানে সবার প্রথমে বাষ্পীয় ইঞ্জিন তৈরি করা হতো।
এবং ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতির ফলে এখন বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন থেকে শুরু করে ডিজেলের ইঞ্জিন ও তৈরি করা হয়। এরপর 1964 সালে উত্তরপ্রদেশের বারাণসী তে ‘ ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কস ‘ নামক একটি কারখানা তৈরি করা হয় এবং এখানেও যথারীতি ডিজেলের ইঞ্জিন তৈরির কাজ শুরু করা হয়।
ভারতের কোথায় কোথায় রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা রয়েছে ?
ভারতের কয়েকটি রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা গুলির সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো –
- জেসপ অ্যান্ড কোম্পানি – এটি পশ্চিমবঙ্গের দমদম এ অবস্থান করছে।
- ডিজেল লোকো মর্ডানাইজেশন ওয়ার্কস – এটি পাঞ্জাব এর পাতিয়ালা তে অবস্থিত এবং এখানে ইলেকট্রনিক ডিজেল ইঞ্জিন তৈরি করা হয়।
- রেল কোচ ফ্যাক্টরি — এটি পাঞ্জাব এর কাপুরথালা তে অবস্থিত এবং এখানে রেল কোচ এবং DMU ও EMU তৈরি করা হয়।
- রেল স্প্রিং কারখানা – এটি মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র এ অবস্থিত এবং এখানে বিভিন্ন ধরনের স্প্রিং তৈরি করা হয়।
চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা :-
চিত্তরঞ্জন ইলেকট্রনিক লোকোমোটিভ ওয়ার্কস হলো ভারতের একটি বিখ্যাত ইলেকট্রিক রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা। বিশ্বের মধ্যে যত বিখ্যাত বিখ্যাত লোকোমোটিভ কারখানা গুলো আছে সেগুলোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম কারখানা।
এই কারখানাটির নাম ভারতের এক স্বাধীনতা বিপ্লবী চিত্তরঞ্জন দাশ এর নাম অনুসারে রাখা হয়েছিল। এই চিত্তরঞ্জন কারখানা টি মোট 18.34 বর্গকিলোমিটার আয়তনের এবং এই কারখানাটি কেন্দ্র করে 191 কিলোমিটার এর একটি রাস্তা, 43 টি স্কুল, 9131 টি কর্মচারীদের আবাসন, সাতটি বাজার এবং আটটি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে।
সবার প্রথম এই কারখানাটিতে বাষ্পীয় ইঞ্জিন তৈরি করা হতো এবং পরবর্তী কালে তখনকার ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ একটি অনুষ্ঠান এর মাধ্যমে সেই কারখানাটির প্রথম স্টিম ইঞ্জিনটি এক ভারতীয় বিপ্লবী যাকে আমরা এখনো দেশবন্ধু নামে চিনি চিত্তরঞ্জন দাশ এর নামে অর্পণ করা হয়।
প্রথমে এই কারখানাটির নাম ছিল স্থানীয় মিহিজাম স্টেশন এবং পরবর্তী কালে এর নামকরণ করা হয় চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা। এরপর থেকে এই কারখানায় ডিজেল হাইড্রোলিক লোকোমোটিভ উৎপন্ন শুরু হতে থাকে।
এখনও পর্যন্ত এই কারখানাটি হলো একমাত্র সরকারি ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ কারখানা। অতএব আমাদের প্রশ্নের উত্তরটি হল- প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের কোথায় রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা আছে? উত্তর : চিত্তরঞ্জন।
অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর :
I’m Sourav, (BA) Graduate. Specialized content writer. Get accurate information from Moneygita.