প্রশ্ন: বায়ুমন্ডলের কোন স্তরে মেরুজ্যোতি দেখা যায়? এই পৃথিবীতে প্রকৃতি দ্বারা সৃষ্টি এমন অনেক দৃশ্য আছে যা আমাদের মুগ্ধ করে তোলে, যা আমাদের কাছে এক রহস্যের মতো। এই রকমের একটি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা সৃষ্ট দৃশ্য হলো মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা।
এই মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা কে যদি আপনারা কখনো ফোন বা কম্পিউটার দেখে থাকেন তাহলে জানবেন জে এটি সত্যিই একটি বিস্ময়কর এবং অপূর্ব দৃশ্য। কিন্তু এই মেরুজ্যোতি আসলে কি ? কিভাবে এর সৃষ্টি হয় ? এগুলো কোথায় দেখতে পাওয়া যায়?
এসব এর উত্তর যদি আপনার না জানা থাকে তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার অনেক সাহায্য করতে চলেছে। আসুন সবার আগে আমরা দেখে নিই- বায়ুমন্ডলের কোন স্তরে মেরুজ্যোতি দেখা যায়?
Table of Contents
বায়ুমন্ডলের কোন স্তরে মেরুজ্যোতি দেখা যায় ?
বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার স্তরে মেরুজ্যোতি দেখতে পাওয়া যায়। মেরুজ্যোতি হলো পৃথিবীর সমস্ত বিস্ময়কর ঘটনা গুলির মধ্যে অন্যতম একটি ঘটনা। এই বিস্ময়কর সৌন্দর্য কে উপভোগ করার জন্য প্রতিবছর অনেক মানুষ ভ্রমণে বের হয়।
নানান প্রকৃতি প্রেমী মানুষেরা এই মেরুজ্যোতি দেখার জন্য কুমেরু এবং সুমেরু অঞ্চলে ভ্রমণের জন্য এসে থাকে। যে সমস্ত দেশ গুলি থেকে মেরুজ্যোতি দেখা যায় সেগুলি হলো আলাস্কা, গ্রীনল্যান্ড এর উত্তর অংশ, আইসল্যান্ড, উত্তর নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি।
মেরুজ্যোতি সাধারণত রাতের বেলায় আকাশে দেখতে পাওয়া যায়। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্রের মত মেরুজ্যোতি ও এমন একটি দৃশ্য যা মানুষের মন কে বিস্ময়কর করে তোলে।
মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা কি ?
মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা হলো প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা গঠিত একটি দৃশ্য। এই দৃশ্য টি সাধারণত পৃথিবীর দুই মেরু অর্থাৎ কুমেরু এবং সুমেরু বা উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চল এর দিকে দেখতে পাওয়া যায়। এই মেরুজ্যতি টি পৃথিবীর সুমেরু অঞ্চলে আরোরাববিয়ালিস নামে পরিচিত।
এবং দক্ষিণ মেরুতে এটি আরোরা অস্ট্রালিস নামে পরিচিত। মহাকাশে দেখতে পাওয়া এই মেরুজ্যোতি সম্পর্কে মেরু অঞ্চলের মানুষদের মনে অন্ধ বিশ্বাস ঢুকে রয়েছে। যেমন অনেকে মনে করে এই মেরুজ্যোতি হলো পূর্বপুরুষ দের আত্ম বা এগুলি হলো স্বর্গ থেকে আসা এক ধরনের আলো।
কিন্তু এগুলো সম্পূর্ণ টাই ভুল। এগুলি কোনো আত্মা বা স্বর্গ থেকে আসা আলো নয় বা এগুলো কোনো অপ্রাকৃতিক ঘটনাও নয়। এটি একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ঘটনা।
মেরুজ্যোতি সৃষ্টির কারণ
মেরুজ্যোতির সৃষ্টির কারণ হলো সূর্য থেকে আসা আয়ন বা আয়নের আধান যুক্ত কনা গুলি। যেহেতু সূর্যের তাপমাত্রা খুব বেশি তাই সূর্যের মধ্যে যে সমস্ত পরমাণু আছে সেগুলিকে ইলেকট্রন বর্জন করে এবং পজিটিভ আধান যুক্ত পরমাণু তে পরিণত হয়।
সূর্যের মধ্যে অনবরত এবং অতিমাত্রায় নিউক্লিয় সংযোজন ও নিউক্লিয় বিভাজন হয়। এই সংযোজন এবং বিভাজন হওয়ার জন্য সৌর ঝড়ের সৃষ্টি হয়। এই সৌর ঝর হওয়ার সময় সূর্য থেকে আসা আয়ন কনা গুলি তীব্র গতিতে সমস্ত মহাকাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
আমাদের পৃথিবী কে একটি সু-বিশাল চুম্বক হিসাবে ধরা হয়। পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে আছে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার নামক একটি স্তর। এই স্তর টিতে চৌম্বক শক্তি কাজ করে। যার ফলে সূর্য থেকে যে সমস্ত পজিটিভ আধান যুক্ত কনা গুলি আছে সেগুলি এই ম্যাগনেটোস্ফিয়ার অঞ্চল এ বাধা প্রাপ্ত হতে থাকে ফলে সেগুলি বায়ু মন্ডল এর ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না।
কিন্তু পৃথিবীর দুই মেরুতে চৌম্বক শক্তি কম থাকার ফলে পজেটিভ আধানযুক্ত কনা গুলি ম্যাগনেটোস্ফিয়ার ভেদ করে পৃথিবীর মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। প্রবেশ করার পর আয়ন গুলি বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসের পরমাণু গুলিকে উত্তেজিত করতে থাকে।
উত্তেজিত হওয়ার ফলে পরমাণুর মধ্যে থাকা ইলেকট্রন গুলি তীব্র গতিতে নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে এর চারপাশে ঘুরতে থাকে। এবং এই ঘূর্ণন এর ফলে মহাকাশে অনেক ধরনের আলোর সৃষ্টি হয়। এই রঙ বেরঙ এর আলোই হলো মেরুপ্রভা বা মেরুজ্যোতি। এই ভাবেই সেই বিস্ময়কর আলোর সৃষ্টি হয়।
মেরুজ্যোতির রং এর মধ্যে বিভেদ দেখা যায় কেন ?
মেরুজ্যোতি নানান সময়ে নানান রঙের দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু সাধারণত মেরুজ্যোতি সবুজ রঙের হয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে লাল রং এর মেরিজ্যতিও দেখতে পাওয়া যায়। যখন আয়ন গুলি অক্সিজেন এর সাথে মিলে যায় তখন সবুজ আলো নির্গত হয়।
এর যদি আয়ন গুলি নাইট্রোজেন এর সাথে মিশে যায় তাহলে লাল রং এর আলো নির্গত হতে থাকে। কখনও কখনও মেরুজ্যোতির রঙ উচ্চতার উপরেও নির্ভর করে। যেহেতু বায়ু মন্ডল এর উপরের অংশে অক্সিজেন বেশি থাকে তাই সেখান থেকে সবুজ রঙের আলো নির্গত হতে দেখা যায়।
আশা রাখি এই প্রশ্নের: বায়ুমন্ডলের কোন স্তরে মেরুজ্যোতি দেখা যায়? উত্তরটি আপনারা জানতে পেরেছেন।
অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর-
I’m Sourav, (BA) Graduate. Specialized content writer. Get accurate information from Moneygita.