প্রতি বৃহস্পতিবার মা লক্ষ্মী পূজার পাঁচালী ও ব্রত কথা

মা লক্ষ্মীর পাঁচালী ও ব্রত কথা এবং প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পূজার পাঁচালী ও ব্রত কথা এই আর্টিকেলে দেওয়া হয়েছে। সাথে লক্ষ্মী পূজার পাঁচালী ও ব্রত কথার বই টিও রয়েছে যা নিছে থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

মা লক্ষ্মীর পাঁচালী ও ব্রত কথা

শরৎ পূর্ণিমার নিশি নির্মল গগন,
মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় পবন।
লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ,
বৈকুন্ঠধামেতে বসি করে আলাপন।
হেনকালে বীণা হাতে আসি মুনিবর,
হরিগুণগানে মত্ত হইয়া বিভোর।
গান সম্বরিয়া উভে বন্দনা করিল,
বসিতে আসন তারে নারায়ণ দিল।
মধুর বচনে লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তায়,
কিবা মনে করি মুনি আসিলে হেথায়।
কহে মুনি তুমি চিন্ত জগতের হিত,
সবার অবস্থা আছে তোমার বিদিত।
সুখেতে আছয়ে যত মর্ত্যবাসীগণ,
বিস্তারিয়া মোর কাছে করহ বর্ণন।
লক্ষ্মীমার হেন কথা শুনি মুনিবর,
কহিতে লাগিলা তারে জুড়ি দুই কর।
অপার করুণা তোমার আমি ভাগ্যবান,
মর্ত্যলোকে নাহি দেখি কাহার কল্যাণ।
সেথায় নাই মা আর সুখ শান্তি লেশ,
দুর্ভিক্ষ অনলে মাগো পুড়িতেছে দেশ।
রোগ-শোক নানা ব্যাধি কলিতে সবায়,
ভুগিতেছে সকলেতে করে হায় হায়।
অন্ন-বস্ত্র অভাবেতে আত্মহত্যা করে,
স্ত্রী-পুত্র ত্যাজি সবাই যায় দেশান্তরে।
স্ত্রী-পুরুষ সবে করে ধর্ম পরিহার,
সদা চুরি প্রবঞ্চনা মিথ্যা অনাচার।
তুমি মাগো জগতের সর্বহিতকারী,
সুখ-শান্তি সম্পত্তির তুমি অধিকারী।
স্থির হয়ে রহ যদি প্রতি ঘরে ঘরে,
তবে কি জীবের এত দুঃখ হতে পারে।
নারদের বাক্য শুনি লক্ষ্মী বিষাদিতা,
কহিলেন মুনি প্রতি দোষ দাও বৃথা।
নিজ কর্মফলে সবে করে দুঃখভোগ,
অকারণে মোর প্রতি কর অনুযোগ।
শুন হে নারদ বলি যথার্থ তোমায়,
মম অংশে জন্ম লয় নারী সমুদয়।
তারা যদি নিজ ধর্ম রক্ষা নাহি করে,
তবে কি অশান্তি হয় প্রতি ঘরে ঘরে।
লক্ষ্মীর বচন শুনি মুনি কহে ক্ষুণ্ন মনে,
কেমনে প্রসন্ন মাতা হবে নারীগণে।
কিভাবেতে পাবে তারা তব পদছায়া,
দয়াময়ী তুমি মাগো না করিলে দয়া।
মুনির বাক্যে লক্ষ্মীর দয়া উপজিল,
মধুর বচনে তারে বিদায় করিল।
নারীদের সর্বদুঃখ যে প্রকারে যায়,
কহ তুমি নারায়ণ তাহার উপায়।
শুনিয়া লক্ষ্মীর বচন কহে লক্ষ্মীপতি,
কি হেতু উতলা প্রিয়ে স্থির কর মতি।
প্রতি গুরুবারে মিলি যত বামাগণে,
করিবে তোমার ব্রত ভক্তিযুক্ত মনে।
নারায়ণের বাক্যে লক্ষ্মী অতি হৃষ্টমন,
ব্রত প্রচারিতে মর্ত্যে করিল গমন।
মর্ত্যে আসি ছদ্মবেশে ভ্রমে নারায়ণী,
দেখিলেন বনমধ্যে বৃদ্ধা এক বসিয়া আপনি।
সদয় হইয়া লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তারে,
কহ মাগো কি হেতু এ ঘোর কান্তারে।
বৃদ্ধা কহে শোন মাতা আমি অভাগিনী,
কহিল সে লক্ষ্মী প্রতি আপন কাহিনী।
পতি-পুত্র ছিল মোর লক্ষ্মীযুক্ত ঘর,
এখন সব ছিন্নভিন্ন যাতনাই সার।
যাতনা সহিতে নারি এসেছি কানন,
ত্যাজিব জীবন আজি করেছি মনন।
নারায়ণী বলে শুন আমার বচন,
আত্মহত্যা মহাপাপ নরকে গমন।
যাও মা গৃহেতে ফিরি কর লক্ষ্মী ব্রত,
আবার আসিবে সুখ তব পূর্ব মত।
গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি এয়োগণ,
করিবে লক্ষ্মীর ব্রত করি এক মন।
কহি বাছা পূজা হেতু যাহা প্রয়োজন,
মন দিয়া শুনি লও আমার বচন।
জলপূর্ণ ঘটে দিবে সিঁদুরের ফোঁটা,
আম্রের পল্লব দিবে তাহে এক গোটা।
আসন সাজায়ে দিবে তাতে গুয়া-পান,
সিঁদুর গুলিয়া দিবে ব্রতের বিধান।
ধূপ-দীপ জ্বালাইয়া রাখিবে ধারেতে,
শুনিবে পাঁচালী কথা দূর্বা লয়ে হাতে।
একমনে ব্রত কথা করিবে শ্রবণ,
সতত লক্ষ্মীর মূর্তি করিবে চিন্তন।
ব্রত শেষে হুলুধ্বনি দিয়ে প্রণাম করিবে,
এয়োগণে সবে মিলি সিঁদুর পরিবে।
দৈবযোগে একদিন ব্রতের সময়,
দীন দুঃখী নারী একজন আসি উপনীত হয়।
পতি তার চির রুগ্ন অক্ষম অর্জনে,
ভিক্ষা করি অতি কষ্টে খায় দুই জনে।
অন্তরে দেবীরে বলে আমি অতি দীনা,
স্বামীরে কর মা সুস্থ আমি ভক্তি হীনা।
লক্ষ্মীর প্রসাদে দুঃখ দূর হইলো তার,
নীরোগ হইল স্বামী ঐশ্বর্য অপার।
কালক্রমে শুভক্ষণে জন্মিল তনয়,
হইল সংসার তার সুখের আলয়।
এইরূপে লক্ষ্মীব্রত করি ঘরে ঘরে,
ক্রমে প্রচারিত হলো দেশ দেশান্তরে।
করিতে যে বা দেয় উপদেশ,
লক্ষীদেবী তার প্রতি তুষ্ট সবিশেষ।
এই ব্রত দেখি যে বা করে উপহাস,
লক্ষীর কোপেতে তার হয় সর্বনাশ।

পরিশেষে হল এক অপূর্ব ব্যাপার,
যে ভাবে ব্রতের হয় মাহাত্ম্য প্রচার।
বিদর্ভ নগরে এক গৃহস্থ ভবনে,
নিয়োজিত বামাগণ ব্রতের সাধনে।
ভিন্ন দেশবাসী এক বণিক তনয়,
সি উপস্থিত হল ব্রতের সময়।
বহুল সম্পত্তি তার ভাই পাঁচজন,
পরস্পর অনুগত ছিল সর্বক্ষণ।
ব্রত দেখি হেলা করি সাধুর তনয়,
বলে এ কিসের ব্রত এতে কিবা ফলোদয়।
বামাগণ বলে শুনি সাধুর বচন,
লক্ষী ব্রত করি সবে সৌভাগ্য কারণ।
সদাগর শুনি ইহা বলে অহঙ্কারে,
অভাবে থাকিলে তবে পূজিব উহারে।
ধনজন সুখভোগ যা কিছু সম্ভব,
সকল আমার আছে আর কিবা অভাব।
কপালে না থাকে যদি লক্ষ্মী দিবে ধন,
হেন বাক্য কভু আমি না করি শ্রবণ।
ধনমদে মত্ত হয়ে লক্ষ্মী করি হেলা,
নানা দ্রব্যে পূর্ণ তরি বানিজ্যেতে গেলা।
গর্বিত জনেরে লক্ষ্মী সইতে না পারে,
সর্ব দুঃখে দুঃখী মাগো করেন তাহারে।
বাড়ি গেল, ঘর গেল, ডুবিল পূর্ণ তরি,
চলে গেল ভ্রাতৃভাব হল যে ভিখারী।
কি দোষ পাইয়া বিধি করিলে এমন,
অধম সন্তান আমি অতি অভাজন।
সাধুর অবস্থা দেখি দয়াময়ী ভাবে,
বুঝাইব কেমনে ইহা মনে মনে ভাবে।
নানা স্থানে নানা ছলে ঘুরাইয়া ঘানি,
অবশেষে লক্ষ্মীর ব্রতের স্থানে দিলেন আনি।
মনেতে উদয় হল কেন সে ভিখারী,
অপরাধ ক্ষম মাগো কুপুত্র ভাবিয়া।
অহঙ্কার দোষে দেবী শিক্ষা দিলা মোরে,
অপার করুণা তাই বুঝালে দীনেরে।
বুঝালে যদি বা মাগো রাখগো চরণে,
ক্ষমা কর ক্ষমাময়ী আশ্রিত জনেরে।
সত্যরূপিনী তুমি কমলা তুমি যে মা,
ক্ষমাময়ী নাম তব দীনে করি ক্ষমা।
তুমি বিনা গতি নাই এ তিন ভুবনে,
স্বর্গেতে স্বর্গের লক্ষ্মী ত্রিবিধ মঙ্গলে।
তুমি মা মঙ্গলা দেবী সকল ঘরেতে,
বিরাজিছ মা তুমি লক্ষ্মী রূপে ভূতলে।
দেব-নর সকলের সম্পদরূপিনী,
জগৎ সর্বস্ব তুমি ঐশ্বর্যদায়িনী।
সর্বত্র পূজিতা তুমি ত্রিলোক পালিনী,
সাবিত্রী বিরিঞ্চিপুরে বেদের জননী।
ক্ষমা কর এ দাসের অপরাধ যত,
তোমা পদে মতি যেন থাকে অবিরত।
শ্রেষ্ঠ হতে শ্রেষ্ট তারা পরমা প্রকৃতি,
কোপাদি বর্জিতা তুমি মূর্তিমতি ধৃতি।
সতী সাধ্বী রমণীর তুমি মা উপমা,
দেবগণ ভক্তি মনে পূজে সবে তোমা।
রাস অধিষ্ঠাত্রী দেবী তুমি রাসেশ্বরী,
সকলেই তব অংশ যত আছে নারী।
কৃষ্ণ প্রেমময়ী তুমি কৃষ্ণ প্রাণাধিকা,
তুমি যে ছিলে মাগো দ্বাপরে রাধিকা।
প্রস্ফুটিত পদ্মবনে তুমি পদ্মাবতী,
মালতি কুসুমগুচ্ছে তুমি মা মালতি।
বনের মাঝারে তুমি মাগো বনরাণী,
শত শৃঙ্গ শৈলোপরি শোভিত সুন্দরী।
রাজলক্ষ্মী তুমি মাগো নরপতি পুরে,
সকলের গৃহে লক্ষ্মী তুমি ঘরে ঘরে।
দয়াময়ী ক্ষেমঙ্করী অধমতারিণী,
অপরাধ ক্ষমা কর দারিদ্র্যবারিণী।
পতিত উদ্ধার কর পতিতপাবনী,
অজ্ঞান সন্তানে কষ্ট না দিও জননী।
অন্নদা বরদা মাতা বিপদনাশিনী,
দয়া কর এবে মোরে মাধব ঘরণী।
এই রূপে স্তব করি ভক্তিপূর্ণ মনে,
একাগ্র মনেতে সাধু ব্রত কথা শোনে।
ব্রতের শেষে নত  শিরে করিয়া প্রণাম,
মনেতে বাসনা করি আছে নিজধাম।
গৃহেতে আসিয়া বলে লক্ষ্মীব্রত সার,
সবে মিলি ব্রত কর প্রতি গুরুবার।
বধুরা অতি তুষ্ট সাধুর বাক্যেতে,
ব্রত আচরণ করে সভক্তি মনেতে।
নাশিল সাধুর ছিল যত দুষ্ট সহচর,
দেবীর কৃপায় সম্পদ লভিল প্রচুর।
আনন্দে পূর্ণিত দেখে সাধুর অন্তর,
পূর্ণতরী উঠে ভাসি জলের উপর।
সাধুর সংসার হল শান্তি ভরপুর,
মিলিল সকলে পুনঃ ঐশ্বর্য প্রচুর।
এভাবে নরলোকে হয় ব্রতের প্রচার,
মনে রেখ সংসারেতে লক্ষ্মীব্রত সার।
এ ব্রত যে রমণী করে এক মনে,
দেবীর কৃপায় তার পূর্ণ ধনে জনে।
অপুত্রার পুত্র হয় নির্ধনের ধন,
ইহলোকে সুখী অন্তে বৈকুন্ঠে গমন।
লক্ষ্মীর ব্রতের কথা বড়ই মধুর,
অতি যতনেতে রাখ তাহা আসন উপর।

যে জন ব্রতের শেষে স্তব পাঠ করে,
অভাব ঘুচিয়া যায় লক্ষ্মীদেবীর বরে।
লক্ষ্মীর পাঁচালী কথা হল সমাপন,
ভক্তি করি বর মাগো যার যাহা মন।
সিঁথিতে সিঁদুর দাও সব এয়োমিলে,
উলুধ্বনি কর সবে অতি কৌতুহলে।
দুই হাত জোড় করি ভক্তিযুক্ত মনে,
নমস্কার করহ সবে দেবীর চরণে,
নমস্কার করহ সবে দেবীর চরণে। 
মা লক্ষ্মীর পাঁচালী ও ব্রত কথা
মা লক্ষ্মীর পাঁচালী ও ব্রত কথা

মা লক্ষ্মীর পাঁচালী ও ব্রত কথা বই

লক্ষ্মী পাঁচালী বই

দাম

মা লক্ষ্মীর পাঁচালী ও ব্রত কথা বই এবং কোজাগরি লক্ষীপুজোর পদ্ধতি। এই বইয়ের মধ্যে দেওয়া হয়েছে যা amazon থেকে খুবই সহজে নিতে পারেন বইটি খুব ভালো। আপনাদের সুবিধার্থে এখানে দেয়া হলো।

প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পূজার পাঁচালী ও ব্রত কথা

প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পূজার পাঁচালী ও ব্রত কথা:

নারায়ং নমস্কৃত্য নরঞ্চৈব নরোত্তমম্।
বন্দে বিষ্ণুপ্রিয়াং দেবীং দারিদ্র্যদুঃখনাশিনীম্।।
দেবীং সরস্বতীষ্ণৈব ততো জয় মুদীরয়েৎ। 
ক্ষীরোপুত্ৰীং কেশবকাত্তাং বিষ্ণুৰক্ষঃবিলাসিনীম্।।
দোল পূর্ণিমার নিশি নির্মল আকাশ।
ধীরে ধীরে বহিতেছে মলয় বাতাস ।।
লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ।
করিতেছে নানা কথা সুখে আলাপন ||
সেইকালে বীণা হস্তে নারদ মুনিবর।
লক্ষ্মী নারায়ণে নমি কহিল বিস্তর।
ঋষি বলে মাগাে তব কেমন বিচার।
সর্বদা চঞ্চলা হয়ে ফির দ্বারে দ্বার ৷
মর্ত্যবাসী সদা তাই ভুগিছে দুর্গতি।
ক্ষণেকের তরে তব নাহি কোথা স্থিতি।
প্রতিদিন অন্নভাবে সবে দুঃখ পায়।
প্রতি গৃহে অনশন জীর্ণ-শীর্ণকায় ॥
নারদের বাক্য শুনি লক্ষ্মী ঠাকুরাণী।।
সঘনে নিঃশ্বাস ত্যজি কহে মৃদুবাণী ।।
বৃহস্পতিবারে মিলি যত এয়ােগণে।
বাড়িবে ঐশ্বৰ্য্য তাহে তােমার কৃপায়।
দুঃখ কষ্ট দূরে যাবে তােমার দয়ায় ॥
শ্রীহরির বাক্য শুনি আনন্দিত মনে।
মর্তে চলিলেন লক্ষ্মী ব্রত প্রচারণে।
অবন্তী নগরে লক্ষ্মী হ’ল উপনীত।
দেখিয়া শুনিয়া হ’ল বড়ই স্তম্ভিত।
নগরের লক্ষপতি ধনেশ্বর রায়।
অগাধ ঐশ্বৰ্য্য তার কুবেরের প্রায়।
সােনার সংসার তার শূন্য হিংসা দ্বেষ ।
প্রজাগণে পালিত সে পুত্র নির্বিশেষে ॥
যথাকালে সসম্মানে গেল লােকান্তর ।।
কভুনা কাহার প্রতি আমি করি রােষ।
পিতার মৃত্যুর পর সপ্ত সহােদর।
হইল পৃথক অন্ন সপ্ত সহােদর ||
নরনারী দুঃখ পায় নিজ কর্মদোষ ॥
যাও তুমি ঋষির ত্রিলােক ভ্রমণে।
ইহার বিধান আমি করিব যতনে ॥
অতঃপর চিন্তি লক্ষ্মী নারায়ণে কয়।।
কিরূপে হরিব দুঃখ কই দয়াময় ।
হরি কহে শুন সতী বচন আমার।
মর্ত্যধামে লক্ষ্মী ব্রত করহ প্রচার ।।।
বৃহস্পতিবারে মিলি যত এয়ােগণে।
সন্ধ্যাবেলা পূজার কথা শুনি ভক্তিমনে।
বাড়িবে ঐশ্বর্যা তাহে তােমার কৃপায়।।
দুঃখ কষ্ট দূরে যাবে তােমার দয়ায় ||
শ্রীহরির বাক্য শুনি আনন্দিত মনে।
মর্তে চলিলেন লক্ষ্মী ব্রত প্রচারণে ॥
অবন্তী নগরে লক্ষ্মী হ’ল উপনীত।
দেখিয়া শুনিয়া হ’ল বড়ই স্তম্ভিত।
নগরের লক্ষপতি ধনেশ্বর রায়।
অগাধ ঐশ্বর্য তার কুবেরের প্রায়।
সােনার সংসার তার শূন্য হিংসা দ্বেষ।
প্রজাগণে পালিত সে পুত্র নির্বিশেষে ৷
এক অন্নে সাত পুত্র রাখি ধনেশ্বর।
যথাকালে সসম্মানে গেল লােকান্তর ||
পিতার মৃত্যুর পর সপ্ত সহােদর।
হইল পৃথক অন্ন সপ্ত সহােদর ।
ক্রমে ক্রমে লক্ষ্মীদেবী ছাড়িল সবারে।
সােনার সংসার সব গেল ছারখারে।
বৃদ্ধা ধনেশ্বর পত্নী না পারি তিষ্ঠিতে।
গহণ কাননে যায় জীবন ত্যজিতে।
হেনকালে ছদ্মবেশে দেবী নারায়ণী।
বন মাঝে উপনীত হলেন আপনি।
মধুর বচনে দেবী জিজ্ঞাসে বৃদ্ধারে।
কিজন্য এসেছ তুমি গহণ কান্তারে ।
কাঁদিতে কাদিতে বৃদ্ধা অতি দুঃখভরে।
তাহার ভাগ্যের কথা বলিল লক্ষ্মীরে।
সহিতে না পারি আর সংসার যাতনা।
ব্রতকথা শুনি তার ভক্তি উপজিল।
ত্যজিব জীবন আমি করেছি বাসনা ।
লক্ষ্মীদেবী বলে শুন আমার বচন।
মহাপাপ আত্মহত্যা নরকে গমন।
আমি বলি সাধবী তুমি কর লক্ষ্মীব্রত।
দুঃখ রবি অস্ত যাবে হবে পূবমত।
মনেতে লক্ষ্মীর মূর্তি করিয়া চিন্তন।
একমনে ব্রতকথা করিবে শ্রবণ ।
ঘরে গিয়ে এয়াে লয়ে কর লক্ষ্মীব্রত।
যেই গৃহে লক্ষ্মীব্রত গুরুবারে হয়।
বাঁধা থকে লক্ষ্মী তথা জানিও নিশ্চয় ।
বলিতে বলিতে দেবী নিজ মূর্তি ধরি।
দরশন দিল তারে লক্ষ্মী কৃপা করি ।
মূর্তি হেরি বৃদ্ধা তারে প্রণাম করিল।
আনন্দিত হয়ে বৃদ্ধা গৃহেতে ফিরিল ৷
গৃহেতে ফিরিয়া বৃদ্ধা করিল বর্ণন।
যেরূপে ঘটিল তার দেবী দরশন।
ব্রতের বিধান সব বধূদের বলে ।
শুনি বধুগণ ব্রত করে কৌতূহলে ॥
বধূগণ লয়ে বৃদ্ধা করে লক্ষ্মীব্রত।
হিংসা দ্বেষ-স্বার্থ ভাব হৈল তিরােহিত।
মালক্ষ্মী করিল তথা পুনরাগমন।
অচিরে হইল গৃহ শান্তি নিকেতন।
দৈবযােগে একদিন বৃদ্ধার আলয়ে।
উপনীত এক নারী ব্রতের সময়ে ||
ব্রতকথা শুনি তার ভক্তি উপজিল ।
লক্ষ্মীব্রত করিবারে মানস করিল ৷
স্বামী তার চিররুগ্ন অক্ষম অর্জনে।
ভিক্ষা করি যাহা পায় খায় দুইজনে।
এই কথা চিন্তি নারী করিছে কামনা।
নিরােগ স্বামীরে কর চরণে বাসনা ॥
ঘরে গিয়ে এয়ো লয়ে করো লক্ষ্মীব্রত ।
ভক্তিসহ সাধবী নারী পুজে বিধিমত ৷৷
দেবীর কৃপায় তার দুঃখ হলাে দূর।
পতি হলাে সুস্থ দেহ ঐশ্বৰ্য্য প্রচুর ॥
কালক্রমে শুভদিনে জন্মিল তনয়।
সংসার হইল তার সুখের আলয় ।
দয়াময়ী লক্ষ্মীমাতা সদয় হইল।
রূপবান পুত্র এক তাহার জন্মিল ||
এইরূপে লক্ষ্মীব্রত করে ঘরে ঘরে।
প্রচারিত হলো ক্রমে অবন্তী নগরে।।
শুন শুন এয়ােগণ এক অপূর্ব ব্যাপার
ব্রতের মাহাত্ম হ’ল যে ভাবে প্রচার ।
অবন্তী নগরে এক গৃহস্থ ভবনে।
এয়ােগণ লক্ষ্মীব্রত করে একমনে ||
সহসা সেখানে এলাে বণিক তনয়।
উপনীত হলাে তথা ব্রতের সময় ।
ধনরত্ন আদি করি ভাই পঞ্চজন।
পরস্পর অনুগত রয় সবর্জন ।
ব্রত দেখি হেলা করি সাধুর তনয়।
বলে একি ব্রত, ইথে কিবা ফলােদায় ॥
সদাগর বাক্য শুনি বলে বামাগণ।
করি লক্ষ্মীব্রত যাতে কামনা পূরণ ॥
পুনরায় কৃপা দৃষ্টি দেন সদাগরে |
এই ব্রত যে করিবে ধনে জনে তার।
লক্ষ্মী বরে হবে তার সােনার সংসার
শুনি তাহা সদাগর বলে অহঙ্কারে
যে জন অভাবে থাকে সে পূজে উহারে ॥
সাধুর সংসার হলাে পূর্বের মতন।
ধনৈশ্বৰ্য ভােগ আদি যা কিছু সম্ভবে।
সবই তাে আমার আছে আর কিবা হবে৷৷
ভাগ্যে না থাকিলে লক্ষ্মী কিবা দিবে ধন।
হেন কথা কভু আমি না শুনি কখন।
অহঙ্কার বাক্য লক্ষ্মী সহিতে না পারে।
গর্বের কারণে লক্ষ্মী ছাড়িল তাহারে ||
অহঙ্কার বাক্য লক্ষ্মী সহিতে না পারে
গর্বের কারণে লক্ষ্মী ছাড়িল তাহারে ॥
ধনমদে মত্ত হয়ে লক্ষ্মী করি হেলা।
নানা রত্ন পূর্ণ তরী বাণিজ্যেতে গেলা।।
দৈবযােগে লক্ষ্মী কোপে সহ ধনজন।
সপ্ততরী জলমধ্যে হইল নিমগন ।
গৃহমধ্যে ধনৈশ্বর্য যা ছিল তাহার।
বজ্রাঘাতে দগ্ধ হয়ে হলাে ছারখার।
দূরে গেল ভ্রাতৃভাব হলাে ভিন্ন অন্ন।
সােনার সংসারে তার সকলে বিপন্ন।
ভিক্ষাজীবী হায়ে সবে ফিরে ঘরে ঘরে।
পেটের জ্বালায় ঘােরে দেশ দেশান্তরে।
এরূপ হইল কেন বুঝিতে পারিল।।
কেঁদে কেঁদে লক্ষ্মীস্তব করিতে লাগিল৷৷
সদয়া হইল লক্ষ্মী তাহার উপরে।
পুনরায় কৃপা দৃষ্টি দেন সদাগরে ।
মনে মনে মা লক্ষ্মীরে করিয়া প্রণাম
ব্রতের সংকল্প করি আসে নিজ ধাম॥
লক্ষ্মীব্রত করে সাধু লয়ে বধুগণ।।
সাধুর সংসার হলাে পূর্বের মতন |
এইভাবে লক্ষ্মীব্রত মর্ত্যেতে প্রচার।
সদা মনে রেখাে সবে লক্ষ্মীব্রত সার।
এই ব্রত যেই নারী করে একমনে।।
লক্ষ্মীর কৃপায় সেই বাড়ে ধনে জনে ।
করযােড় করি হাত ভক্তি যুক্ত মনে।
করহ প্রণাম এবে যে থাক যেখানে।
ব্রতকথা যেবা পড়ে যেবা রাখে ঘরে ।
লক্ষ্মীর কৃপায় তার মনােবাঞ্ছা পুরে ॥
লক্ষ্মীর ব্রতের কথা বড় মধুময়।
প্রণাম করিয়া যাও যে যার আলয় ।
লক্ষ্মী ব্রতকথা হেথা হৈল সমাপন।
মনের আনন্দে বল লক্ষ্মীনারায়ণ।

Next: কেন আমাবস্যায় মা কালী পুজো করা হয়?

অতএব এই আর্টিকেলের মধ্যে সম্পূর্ণ লক্ষ্মী পূজার ব্রত কথা ও পাঁচালিটি (মা লক্ষ্মীর পাঁচালী ও ব্রত কথা এবং প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পূজার পাঁচালী ও ব্রত কথা) দেওয়া হয়েছে। ভালো লেগে থাকলে অন্যান্য বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

Leave a Comment