লতা মঙ্গেশকর প্রবন্ধ রচনা [PDF] | Lata Mangeshkar Rachana in Bengali

আলোচ্য বিষয় : লতা মঙ্গেশকর প্রবন্ধ রচনা / Lata Mangeshkar Rachana in Bengali

রচনালতা মঙ্গেশকর

ভূমিকা:        

“আমাদের জীবনে আমাদের কখনোই হার মানলে হবে না, আমাদের অবিরাম কাজ করে যওয়া উচিত,  একদিন আমরা অবশ্যই সফলতা অর্জন করবো” – –লতা মঙ্গেশকর

এর মতই আরও বিখ্যাত বিখ্যাত গান আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন সেই মহান গায়িকা। কিংবদন্তি লতা হলেন সঙ্গীত জগতের এক বিখ্যাত স্বনামধন্য সম্রাগি গায়িকা। ১৯৮৬ সালে ইন্ডিয়া টু- ডে পত্রিকাতে একটি প্রশ্ন উঠেছিল জে ভারতবর্ষে শিল্প ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কার অবদান সবথেকে বেশি?

তখন জনগণের ভোটের মাধ্যমে দেখা গেছে মকবুল ফিদা হুসেন, ভীম সেন, যোশী রাজ কাপুর, সত্য়জিৎ রায় এমনকি অমিতাভ বচ্চন এর মত বিখ্যাত শিল্পীরাও স্থান পেয়েছেন লতা মঙ্গেশকরের নিচের শাড়িতে।

আড়াই ঘন্টার যে কোন সিনেমাতে হয়তো গান থাকে 20- 25 মিনিট সেখানে আবার নারী কণ্ঠের স্থান পায় 10 থেকে 12 মিনিট ওই সামান্য সময়। নিজের কন্ঠে পরিবেশন করে তিনি মুগ্ধ করেছিলেন তিনটি প্রজন্মের শ্রোতাদের।

লতা মঙ্গেশকরের জন্মকাল : 

১৯২৮ সালের 28 শে সেপ্টেম্বর দিনোনাথ মঙ্গেশকর এবং শেবন্তি এর ঘরে যে প্রথম সন্তান আসে তিনি আর কেউ নন বরং লতা মঙ্গেসকার। পন্ডিত দিননাথ ছিলেন সঙ্গীত আচার্য ও নাটক এর শিক্ষক। প্রথমে মাতা ও পিতার নাম লতার রেখেছিলেন হেমা যিনি আমাদের কাছে লতা মঙ্গেসকার নামে পরিচিত।

লতা মঙ্গেসকারের পিতা একইসাথে মঞ্চ নাটক এবং অভিনয় করতেন। নাটকের জন্য কনো কনো সময় গানও গাইতেন তিনি। ভব বন্ধন নামে একটি নাটক পরিচালনার পর সেখানকার প্রধান চরিত্র লতা কে দিনোনাথ ও শেবন্তি খুব পছন্দ হয়।

তখন তারা তাদের সন্তানের নাম হেমা থেকে বদলে করেন লতা মঙ্গেশকর আর এরই সূত্র ধরে সেদিনকার হেমা হয়ে উঠলেন আজকের এই লতামঙ্গেশকর।

লতা মঙ্গেশকরের শৈশবকাল: 

 এরপর লতার পরিবারে একের পর এক সংগীতে মহারথীদের আগমন ঘটতে থাকে। এবার একে একে জন্মগ্রহণ করেন আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর ,বিনা মঙ্গেশকর এবং সবার ছোট হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর। নিজের ভাই বোনদের খুবই ভালবাসতেন লতা।

ছোটবেলায় তিনি প্রতিদিনই তার বোনকে সাথে করে নিয়ে যেতেন। তখন স্কুল তার বোনকে আনতে বাধা দিলে তখন লতা একপ্রকার রাগ করেই সেই স্কুল ছেড়ে দেন। দিনোনাথ তার বাড়িতেই ছেলে মেয়েদের গান শেখাতেন।

একদিন দিনোনাথ গান শেখানোর সময় কিছুক্ষণের জন্য বাইরে গেলে একজন ছাত্রকে বলে গিয়েছিলেন গানের অনুশীলন করতে । কিছুক্ষণ পর তিনি ফিরে এসে দেখেন ছোট লতা তার ছাত্রের গানের রাগ শুধরে দিচ্ছে।

তখন থেকেই লতা তার বাবার কাছে অনুশীলন শুরু করে। পাঁচ বছর বয়স থেকেই তার বাবার লেখা নাটকে তিনি ছোট চরিত্রে অংশগ্রহণ করতে লাগলেন। এর মাধ্যমে একদিন কনো নাটকের চরিত্র নারদমনি এসে উপস্থিত হতে পারেননি। তাঁর আবার গান গাওয়ারো কথা ছিল।

তখন লতা সেই সুযোগে বলে ওঠে সে সেই চরিত্র করবে কিন্তু লতা তখন খুবই ছোট থাকায় দিনোনাথ তাতে না করে দেন। কিন্তু শেষমেশ লতার জোরাজুরিতে রাজি হয়ে যান তাঁর পিতা। সেদিন অভিনয় শেষে দর্শকরা আবার চাই আবার চাই বলে চিৎকার করে উঠেছিল।

কিন্তু পিতার সাথে বেশিদিন চলতে পারে নি লতা হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে  ১৯৪২ সালে দিনোনাথ মারা যান এবং তখন লতা ছিল মাত্র ১৩ বছর। তারপর থেকেই শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। 

লতা মঙ্গেশকরের কর্মজীবন : 

পিতার মৃত্যুর পর মঙ্গেশকর পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ায় মাস্টার বিনায়ক। লতার ছোটবেলায় মাঝে মাঝে গান গাওয়া টাকে মাস্টার বিনায়ক সেই গান ও অভিনয় টিকেই নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে সাহায্য করেছিলেন।

কিন্তু চলচ্চিত্রে জীবনে কখনোই আপন করে নিতে পারেনি লতা। একদিন কাজ শেষে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি এলে মাকে বলেন এই অভিনয় জীবনকে তিনি আর নিতে পারছেন না । কিন্তু পরিবারের পুরো দায়ভার ছিল তারই উপর। 

এরপর বিনায়ক এর মৃত্যুর পর সঙ্গীত গুরু গোলাম হায়দার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন লতার। তার 84 তম জন্মবার্ষিকীতে তিনি বললেন গোলাম হায়দার হলেন তার “Godfather”। এই গোলাম হায়দার এর মাধ্যমে লতার কাছে সুযোগ আসে মজবুর চলচ্চিত্রে “দিল মেরা তোদা কাহি কা না  ছড়া” গানটি গাওয়ার সুযোগ। মাত্র একটি গানেই পুরো ইন্ডাস্ট্রি বাধ্য হলেন তাকে আরো সুযোগ দিতে। 

এরপর ধীরে ধীরে শত শত গানে আপ্লুত করেছেন লাখো লাখো মানুষকে। এরপর একের পর এক সুপারহিট গান গেয়ে শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন লতাজি। গানের মাধ্যমেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং সব জনগণই মাথায় করে এবং নয়নের মনি করে রাখতেন তাকে।

বিভিন্ন কন্ঠকে নিজের সুরে এর মাধ্যমে মানিয়ে নিতে পারতেন লতা। থেমে থাকে না সময় থেমে থাকেনি লতা। তাঁর এত এত গানের সৃষ্টির ফলে অনায়াসে গিনিস বুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এর সর্বোচ্চ গানের রেকর্ড হিসেবে তার নাম উঠে আসে। 

লতা মঙ্গেশকরের প্রাপ্ত পুরস্কার :

 লতার এরূপ সব গানের জন্য রয়েছে তার প্রাপ্য অনেকগুলি পুরস্কার। ১৯৫৯ সালে একটি সপ্তাহে মোট ৩০ টি গান গেয়ে রেকর্ড করেছিলেন লতা। তিনি জাতীয় পুরস্কার 12 টি, বাঙ্গালী ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং চারটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার।

১৯৬৯ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৭৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে, ১৯৯৯ সালে পদ্মবিভূষণ এবং ২০০১ সালে ভারতীয় দ্বিতীয় সংগীতশিল্পী হিসেবে অর্জন করেছিলেন ভারতরত্ন পুরস্কার। 

রচনার বিষয় : লতা মঙ্গেশকর প্রবন্ধ রচনা

লতা মঙ্গেশকরের সুপার হিট গান গুলি : 

১৯৪৯ সালে বিখ্যাত একটি গান “জিয়া বেকারার হে” গেয়ে শ্রোতাদের মধ্যে উত্তর ফেলে দিয়েছিলেন লতা। আবার “মন দোলে মেরা তান দোলে” গান দুলিয়েছিল সবার হৃদয়।” আজারে পরদেশী ” ডেকেছিল সমস্ত সংগীত রসিকদের।

৮৫ এর দশকে তিনি গান করে ছিলেন নামিদামি সব শিল্পীদের সাথে। এবং ষাটের দশকে মানুষকে উপহার দিয়েছিলেন “পেয়ার কিয়া তো ডারনা কেয়া”।

 ১৯৬৩ সালে যখন ভারতের যুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি গাইলেন “এ মেরে বাতান কে লোগো” আরে গান শুনে চোখে জল চলে আসে পন্ডিত জহরলাল নেহেরুর। একবার নৌশাদ বলেছিলেন যে লতার মতো শিল্পী তিনি আগে কখনো দেখেননি যুগে যুগে এমন একটি রত্ন জন্ম নেয় যার ওপর ঈশ্বরের হাত থাকে তেমনি একজন ছিলেন লতা। 

লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যু : 

এই কোকিলা কণ্ঠী লতামঙ্গেসকার ৯২ বছর বয়সে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে নিজে সর্ব শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।

Lata Mangeshkar Rachana PDF

Lata Mangeshkar Rachana PDF Download here

অন্যান্য রচনা এবং পরীক্ষার সাজেশন পেতে আমাদের Whatsapp group জয়েন করতে পারেন.

অন্যান্য রচনা গুলি-

বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা দুর্গাপূজা অনুচ্ছেদ রচনা
খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তাদৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

লতা মঙ্গেশকর সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন-

লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যু দিন?

লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যু হয়েছিল ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে।

লতা মঙ্গেশকরের বয়স কত?

লতা মঙ্গেশকরের বয়স হল 92 বছর।

লতা মঙ্গেশকরের শেষ গান?

দেবী লতা মঙ্গেশকরের শেষ ফিল্মী গান হল 2006 সালে “রংগ দে বসংতী” মুভির “লুকা ছুপ্পী” গান।

লতা মঙ্গেশকর কয় ভাই বোন?

দেবী লতা মঙ্গেশকরের মোট পাঁচ  ভাই বোন ছিলেন। তার মধ্যে তিনি ছিলেন সবথেকে বড়। লতা মঙ্গেশকরের বাকি ভাই বোনের নাম হল- আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর, মীরা মঙ্গেশকর, হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।

লতা মঙ্গেশকর এর প্রকৃত নাম?

দেবী লতা মঙ্গেশকরের প্রথম থেকে নাম লতা ছিলো না। তাঁর মা ও বাবা নাম রেখেছিলেন ‘হেমা‘।

এই লতা মঙ্গেসকার প্রবন্ধ রচনাটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে। তাহলে অবশ্যই এই রচনাটি আপনাদের বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদেরকে শেয়ার করে তাদের কাছেও এই Lata Mangeshkar Rachana রচনাটি উপলব্ধ করিয়ে দিন।

Leave a Comment