রচনার বিষয়- বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা রচনা বা বাঙালির প্রিয় উৎসব দুর্গাপূজা রচনা, শারদোৎসব রচনা বা আমার প্রিয় উৎসব দুর্গাপূজা রচনা।
Table of Contents
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা রচনা
ভূমিকা:
বাঙালির একাধিক ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে দুর্গাপূজা হল শ্রেষ্ঠ উৎসব। বাঙালির জীবন একাধিক উৎসবের কিরণে মুখরিত হয়। দুর্গাপূজা উৎসবের আগমনের সাথে সাথে প্রত্যেকটি বাঙালির বুকে আনন্দের ঝরণা বয়।
শরৎের মেঘ, কাশ ফুলের দোলা ও শিউলি ফুলের গন্ধ বহন করে নিয়ে আসে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা কে। মহালয়ার শুভ বন্দনার দ্বারা আমাদের দীর্ঘ এক বছরের অপেক্ষার পতন ঘটে। প্রাচীন কাল থেকে আমাদের হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, মাতৃ শক্তিকে পূজা করা হয়।
আর মাতৃ শক্তির প্রধান উৎস হলেন মা দুর্গা। বছরের প্রায় প্রত্যেকটি মাসে একাধিক পূজা-উৎসবে তালিকা রয়েছে, তবে এই একাধিক উৎসবের তালিকার মধ্যে বাঙালি যে উৎসবের জন্য বেশি উৎসুকতা থাকে তা হল এই দুর্গা পূজা উৎসব।
দুর্গাপূজার পটভূমি :
হিন্দু-পুরাণ অনুযায়ী, পুরাকালে রাজা সুরথ তার সাম্রাজ্য হাতছাড়া করে ফেলেন। তার এই হাতছাড়া সাম্রাজ্য পুনরায় অর্জন করার জন্য বসন্তকালে মাতা দুর্গার পূজা করেছিলেন। এই কারণ হেতু দুর্গাপূজাকে বসন্ত পূজাও বলা হয়ে থাকে।
অপরদিকে কৃত্তিবাসী রামায়ণ অনুযায়ী, স্বয়ং শ্রীরাম চন্দ্র রাবণকে যুদ্ধে পরাস্ত করার পূর্বে এবং তার স্ত্রী মাতা সীতাকে লঙ্কা থেকে উদ্ধার করার জন্য, শরৎকালে ১0৮ টি নীল পদ্ম ফুল দ্বিয়ে মা দুর্গার পূজা করেছিলেন।
যেহেতু এই পূজা রামচন্দ্র শরৎকালে করেছিলেন তাই একে শারদীয়া বলা হয়ে থাকে। বাঙালিরা দুর্গাপূজা বলতে শ্রীরামের অকালবোধনকেই শারদোৎসব হিসেবে মান্যতা দিয়েছেন।
দুর্গাপূজার সময়কাল:
শারদীয়া দুর্গাপূজার সময়কাল বলতে বোঝায় প্রধানত আশ্বিন মাসের শুল্কপক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত। দুর্গাপূজার এই পাঁচ দিনকে যথাক্রমে “দুর্গা ষষ্ঠী”, “দুর্গা সপ্তমী”, “মহাষ্টমী”, “মহানবমী” এবং “বিজয়া দশমী” বলা হয়। আশ্বিন মাসের এই “শুল্কপক্ষের” অপর নাম হল “দেবীপক্ষ”।
মহালয়া:
মা দুর্গার পুজো শুরু হওয়া এক সপ্তাহ পূর্বে আমাবস্যার দিন পালিত হয় মহালয়া। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী এই দিনটিতে হিন্দুরা তাদের পূর্বপুরুষদের জন্য তর্পনের পালন করেন।
মহালয়ার ভোর বেলায় রেডিওতে আমরা শুনতে পারি চণ্ডীপাঠ। সাথে সাথে টিভিতে মা দুর্গার নাটকীয় প্রোগ্রাম দেখানো হয় ও সকলে পটকা বাজি ফাটায় আনন্দ সহকারে।
অকালবোধন:
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, শরৎকালকে দেব-দেবীদের ঘুমানোর সময় বা বিশ্রাম করার সময় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু শ্রীরাম চন্দ্র লঙ্কাধিপতি রাবণকে যুদ্ধে পরাস্ত করার জন্য মাতা দুর্গার পূজা আর্চনা করেছিলেন।
এই কারণবশত যেহেতু শ্রীরাম অসময়ে-অকালে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন তাই এই দুর্গাপূজাকে অকালবোধন বলা হয়।
মা দুর্গার রূপের বর্ণনা:
দেবী দুর্গা সপরিবার সহিত মর্তে আগমন করেন। বাংলার প্রতিটি পূজা মন্ডপ ও মন্দিরে মাতা দেবীর সপরিবার সহিত মূর্তি দেখা যায়। যার মধ্যস্থলে থাকেন দেবী দুর্গা সিংহের পিঠে চড়ে ও দেবীর অস্ত্রে আঘত পদতলে উপস্থিত মহিষাসুর।
মা দুর্গার দশটি হাতে দশটি ভিন্ন ভিন্ন অস্ত্র। মা দুর্গার ডান দিকে ও বাঁদিকে থাকেন তার ছেলে মেয়েরা। ডানদিকে থাকেন দেবী লক্ষ্মী ও তার বাহন পেঁচা এবং গনেশ ও তাহার বাহন ইঁদুর। বামদিকে থাকেন সরস্বতী দেবী ও তাহার বাহন হাঁস এবং সঙ্গে কার্ত্তিক ও তাহার বাহন ময়ূর।
দুর্গা পূজার বিবরণ:
দুর্গাপূজার এই পাঁচটি দিনে (ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী) মূলত উৎসব লেগে থাকে। শাস্ত্রবিধি মেনে পূজা পালন করা হয়।
পূজোর এই পাঁচটি দিনগুলোতে যথাক্রমে ষষ্ঠীর দিন- মা দুর্গার বোধন, সপ্তমীর দিন- নবপত্রিকা স্নান, অষ্টমীর দিন- কুমারী পূজা, অষ্টমী ও নবমীর অধিক্ষনে- সন্ধি পূজা এবং দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জন।
প্রতিমা বিসর্জনের দিনটি বিজয় দশমী নামেও পরিচিত। পূজার এই পাঁচ দিনে ঢাক, কাঁসর, ঘন্টা, ধূপ, ধুনো, মন্ত্রপাঠ, চণ্ডীপাঠ, চন্দনের সুগন্ধ ও গান-বাজনার সাথে সাথে সকলে আনন্দে মেতে ওঠে।
দুর্গাপূজার বিস্তার:
দুর্গাপূজা ভারতের একাধিক রাজ্যে হয়ে থাকলেও প্রধানত বাংলার দুর্গাপূজা সত্যি বিখ্যাত এবং বাঙ্গালীদের খুবই ভালোবাসার একটি পূজা।
তবে বর্তমানে এই দুর্গা পূজা ভারতের একাধিক রাষ্ট্র (যেমন- আসাম, ত্রিপুরা, বিহার, মনিপুর, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা) ইত্যাদি এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ (ভুটান, নেপাল, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইতালি) ইত্যাদিতে দুর্গাপূজার বিস্তার লাভ ঘটেছে।
এই বিদেশী দেশগুলোতে প্রবাসী বাঙালিরা দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত করে থাকেন। নন-বেঙ্গলিরা দূর্গা পূজার সময় নবরাত্রি পালন করেন।
রচনার বিষয়: দুর্গাপূজা রচনা
দুর্গাপূজার আনন্দ:
বাঙালির কাছে পূজোর এই পাঁচটা দিন খুবই আনন্দের। পুজো আসার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই সকলের নতুন জামা-কাপড়, জুতো কেনার ধূম লেগে থাকে। বাজারে থাকে দুর্গাপূজার কেনাকাটির জন্য অনেক ভিড়।
পরিবার, আপনজনদের মধ্যে জামা কাপড় উপহার দেওয়া। সধ বাদেদের মধ্যে আলতা সিন্দুর বিনিময়। সকাল থেকে শুরু হয় প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখার আনন্দ। পুজো মন্ডপের মেলা, খাওয়া-দাওয়া, সারাদিন ঘোরাঘুরি।
দশমীর আগমন আর আমাদের সকলের মন খারাপের কারণ। দশমীর দিন পূজা মন্ডপে সিঁদুর খেলা হয়। সাথে হয় গান-বাজনার সাথে দেবী দুর্গার বিসর্জন। আবার একটি বছর অপেক্ষা। শুভ বিজয়ার প্রণাম ও শুভেচ্ছা।
পারিবারিক ও সার্বজনীন দুর্গাৎসব:
পারিবারিক দুর্গাৎসব মূলত উচ্চবিত্ত, ধ্বনি ও জমিদারী পরিবারগুলোতেই আয়োজন করা হয়। এই পারিবারিক পূজাকে “বনেদি বাড়ির পূজাও” বলা হয়। পারিবারিক দুর্গা পূজার মূল ভিত্তি হল শাস্ত্রাচার পালন।
অপরদিকে আঞ্চলিক স্তরে এক একটি পাড়া, ক্লাব, অঞ্চলের মানুষেরা মিলেমিশে যৌথভাবে যে পূজা অনুষ্ঠিত করা হয় তাকে বারোয়ারি বা সার্বজনীন দুর্গোৎসব বলা হয়।
কলকাতা শহরের উল্লেখযোগ্য কিছু সার্বজনীন দুর্গোৎসবের নাম হলো শ্যামাপুকুর সার্বজনীন, বাগবাজার সার্বজনীন দুর্গাৎসব এছাড়াও বেলুড় মঠ, রামকৃষ্ণ মঠ ও ভারত সেবাশ্রম সংঘগুলোতেও দুর্গা উৎসব হয়ে থাকে। এই পূজা বিশেষ থিম ও প্রতিমার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে দেখা যায়।
উপসংহার:
এই দুর্গাপূজায় ধনী-দরিদ্র, জাতিগত ভেদাভেদকে দূরে সরিয়ে এবং ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে একসাথে মিলনের মাধ্যমে একে অপরকে আনন্দের সাথে জড়িত রাখার বন্ধন হল বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাৎসব।
👉 Madhyamik Suggestion 2024 PDF 👈
Next: ২০২৩ দুর্গা পূজা কত দিন বাকি
Durga Puja Rachona PDF
বাঙালির প্রিয় উৎসব দুর্গাপূজার রচনা সম্পূর্ণ রচনাটির PDF এখান থেকে ডাউনলোড করুন 👇
অন্যান্য রচনা এবং পরীক্ষার সাজেশন পেতে আমাদের Whatsapp Group জয়েন করতে পারেন.
এই দুর্গাপূজা প্রবন্ধ রচনাটি পরীক্ষায় আরো অন্যান্য নামেও আসতে পারে। যেমন- শারদোৎসব রচনা, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা রচনা, বাঙালির প্রিয় উৎসব দুর্গাপূজা রচনা, আমার প্রিয় উৎসব দুর্গাপূজা রচনা। তাই এই নাম গুলো মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের নাম কি?
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের নাম দুর্গাপূজা উৎসব।
কোন পুজোকে অকালবোধন বলা হয়?
শরৎকালে অসময়ে-অকালে শ্রীরামচন্দ্র দুর্গাপূজা করেছিলেন বলে এই পূজা কে অকালবোধন বলা হয়।
আরো পড়ুন- Nursery English Workshop PDF
I’m Sourav, (BA) Graduate. Specialized content writer. Get accurate information from Moneygita.