প্রাত্যহিক দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা [PDF] | Doinondin Jibone Biggan           

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান / প্রাত্যহিক জীবনে রচনা যা অভিজ্ঞ শিক্ষিকাদারা রচিত এবং এর PDF নিচে দেয়া হলো।

প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী তোমাদের এই দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান বা প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান রচনাটি সুন্দরভাবে লিখিত আকারে নিচে দেয়া হলো এবং এর PDF রয়েছে যা তোমরা এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান           

সৃষ্টির শুরুতে মানুষ প্রকৃতির হাতের পুতুল ছিল। মানুষ যে আগুনকে ভয় পেত তাকে বশ করলো পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালিয়ে, পাথরের অস্ত্র বানিয়ে নিজেদেরকে রক্ষা করতে শিখলো। তখন মানুষের মধ্যে এক বিশেষ জ্ঞানের উদ্ভব হলো বা সঞ্চার হলো বলতে পারি।

এই বিশেষ জ্ঞান মানুষের মধ্যে বাড়তে বাড়তে যুগের পর যুগ বিকাশ করতে থাকলো। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান কথাটির অর্থ হলো- বিশেষ জ্ঞান। এই বিশেষ জ্ঞান সেই আদিমকাল থেকে বর্তমান যুগে আমাদের নিয়ে এসেছে। জীবন মানেই যুদ্ধ। 

এই জীবন যুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে আমাদের বিজ্ঞান। তাই আজকে বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করব রচনার মাধ্যমে, নাম দিলাম- ‘দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান’।        

 দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

“আধুনিক সভ্য়তা বিজ্ঞানের দান,
            প্রতিদিন প্রতিক্ষন তারই গুনগান”

ভূমিকা

সভ্যতার পর সভ্যতা পার করতে, বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহার মানব সভ্যতার চলার পথকে সহজ করে এসছে। বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে আমরা এক মুহূর্ত এই বিজ্ঞান ছাড়া অচল। সৃষ্টির শুরু থেকেই যে বিশেষ জ্ঞান মানবজাতির গতিধারা কে প্রতিনিয়ত উন্নত সহজ ও সুন্দর করেছে, সেই বিশেষ জ্ঞান অর্থাৎ বিজ্ঞানকে ধন্যবাদ। 

আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে বিজ্ঞানের অনস্বীকার্য প্রভাব রয়েছে। মানুষ তার উন্নত বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানকে নানা প্রয়োগ করে প্রতিদিন নতুনের সৃষ্টি করে চলেছে। মানব সভ্যতার বিপ্লব ঘটিয়ে প্রস্তর যুগে অস্ত্রাদি, আগুন সবকিছুই বিজ্ঞানের আশীর্বাদ। বিজ্ঞান সভ্যতার বুকে প্রদীপ জ্বেলেছে। বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ চলেছে নতুন্তের আবিষ্কারে।                      

বিজ্ঞানের সূচনা কাল

প্রয়োগমূলক বিজ্ঞানের সিঁড়ির ওপর ভর করে মানুষ সভ্যতার শিকড়ে অধিষ্ঠান করেছে। আজকের এই আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা কাল হিসেবে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পর্বকেই আমরা মোটামুটি চিহ্নিত করে বলতে পারি। বিদ্যুতের আশ্চর্যজনক আবিষ্কার মানুষের জীবনধারাকে নিমেষে সূর্যের আলোর মতো আলো দান করেছিল। 

রাত্রির অন্ধকারে আর মানুষ পথ হারায় না রাত্রি কেউ বিজ্ঞান আলোকিত করেছে। তবে প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের জীবনে বিজ্ঞান আশীর্বাদ বর্ষণ করে চলেছে। তাই বিজ্ঞানের সঠিক সূচনাকার যে কোনটি সে বিষয়ে মতামতের শেষ নেই। 

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানে ব্য়বহার

সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত সমস্ত সামগ্রী বিজ্ঞানের দান। আমাদের বাড়িঘর, অট্টালিকা, যে এলার্ম ঘড়ির শব্দে আমাদের ঘুম ভাঙছে সকালে, কলিং বেল, দেশ দেশান্তরের খবর এনে দেয় যে খবরের কাগজ, গ্যাসের উনুন যাতে করে আমরা রান্না করছি, টেলিভিশনের মাধ্যমে পৃথিবীর খবর জানতে শুনতে ও দেখতে পারছি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখছি, গরমের থেকে রক্ষা পেতে পাখা, এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহার, দ্রুত যাতায়াতের বাস গাড়ি সাইকেল ট্রেন-ট্রাম প্রভৃতি সুবিধা পাচ্ছি, ঠান্ডা জলের তেষ্টা মিটাচ্ছে রেফ্রিজারেটর, আমরা পোশাক-আশাক পাচ্ছি সেগুলো পরিষ্কার রাখার জন্য ডিটারজেন্ট সাবান প্রভৃতি বিজ্ঞানের আবিষ্কার।         

"বিজ্ঞানী বর্তমান জগতের উন্নতির মাপকাঠি বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সভ্যতার অগ্রগতি"
                   -- আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান

বিজ্ঞান চিকিৎসা ক্ষেত্রেও নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ থেকে বিজ্ঞান কেমোথেরাপির মাধ্যমে মানুষকে সারিয়ে তুলছে। কৃত্রিম অক্সিজেনের মাধ্যমে মানব শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাচ্ছে। তাতে করে মানুষের আয়ু বাড়ছে।

মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডের অস্ত্রোপচার চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সাপে কামড়ালে মানুষ ওঝার কাছে না গিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে বিভিন্ন ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে কঠিন কঠিন রোগ থেকে আমরা মুক্তি পাচ্ছি। চিকিৎসা ব্যবস্থা শুধু মানুষেরই উপকার করছে না মানুষের সাথে সাথে পশুপাখি গাছপালা সবাইকে সুস্থ রাখছে এই বিজ্ঞান সৃষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা। 

বিভিন্ন রোগের বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে আমাদের জীবন পথকে সুগম করেছে বিজ্ঞান। সবশেষে বলতে হয় বিজ্ঞানের দৌলতে আমরা ডাক্তার নামক মানুষরূপী ভগবানকে পেয়েছি।             

কৃষিকাজে বিজ্ঞান

বিজ্ঞান কৃষি কাজকে আরো সহজ করে তুলেছে। ট্রাক্টরের মাধ্যমে চাষবাসে মানুষের খাটনি কমেছে। বিভিন্ন কীটনাশক এর ব্যবহারে ফসল পোকা লেগে নষ্ট হয় না। রাসায়নিক সার প্রয়োগে উন্নতমানের ফসল ফলছে যা আমাদের খাদ্য চাহিদা মেটাচ্ছে। কৃষি কাজে প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ বিজ্ঞানের মাধ্যমেই হচ্ছে।        

শিক্ষা ও বিজ্ঞান

আদিম মানুষ যেখানে গুহার গায়ে নিজেদের ইতিহাস ছেড়েছে, বর্তমান যুগে দাড়িয়ে বিজ্ঞান মানুষকে পেন্সিল পেন বোর্ড খাতা বই কাগজ ইত্যাদি এনে দিয়েছে। মানুষের মনের নানা ভুল ধারণা-অবিশ্বাস জন্ম দিয়েছিল কুসংস্কার। এই কুসংস্কার সভ্যতার অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছিল।

বিজ্ঞান মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে কুসংস্কাকে অনেকাংশে দূর করেছে। বিজ্ঞান মনের সংকীর্ণতা, ভুল ধারণা দূর করতে যুক্তি দিয়ে বুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করতে শিখিয়েছে। বিজ্ঞান নিরক্ষরতার বুকে শিক্ষার আলো জ্বেলেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের কম অবদান নেই।                  

তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার হল কম্পিউটার ও ইন্টারনেট। কম্পিউটার শুধু গণনাই করে না যে কোন জটিল সমস্যার সমাধানও করে। তথ্য নির্দেশ গ্রহণ ও সংরক্ষণ করতে পারে কম্পিউটার। আর ইন্টারনেট আমাদের ঘরে বসে বিদেশ ভ্রমণও করিয়ে দিচ্ছে, দূরে থাকা মানুষের সাথে কথা বলা ও সাক্ষাৎ দুই করিয়ে দিচ্ছে। 

এই ইন্টারনেট আবিষ্কার করে পৃথিবীকে হাতের মুঠো এনে দিয়েছে বিজ্ঞান। পারমাণবিক শক্তিতে দেশ তথা মানুষকে শক্তিশালী করে তুলেছে। আজ আমরা মহাকাশে, মঙ্গল গ্রহে, চাঁদে যান পাঠিয়ে নজর রাখতে পারছি বিজ্ঞানের জন্যই।                 

“সভ্য়তা ধরেছে আগেই বিজ্ঞানের হাত
রাত তাই দিন হল, দিন হল রাত”

অন্যান্য ক্ষেত্রে বিজ্ঞান

বিজ্ঞান আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ সরল করেছে যানবাহনের সৃষ্টি করে। দূরের যাত্রা কে নিকট করে দিয়েছে রেলগাড়ি- বিমান -জাহাজ প্রভৃতির। আমাদের আমোদ প্রমোদের উপকরণ ও যোগায় বিজ্ঞান, যেমন -টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, রেডিও,চলচ্চিত্র ইত্যাদি।

বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি মেশিন তৈরি করেছে, যাকে নিয়ে নানান কলকারখানা গড়ে উঠেছে। বিজ্ঞান চিন্তাধারা নিয়ে মানুষ রোবট তৈরি করেছে ও করছে। ব্যবসা-বাণিজ্য কেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞান। 

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যকে বিজ্ঞান আরো সুস্বাদু করে তুলেছে। নদী পুকুরের জল আজ আমরা ঘরের মধ্যে পাচ্ছি তাও বিজ্ঞানের মাধ্যমে। ঘর মোছা, জামা কাপড় কাচার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, রান্নার বাসনপত্র, গ্যাস, মাইক্রো ওভেনের সুবিধা পেয়েছি আমরা বিজ্ঞানের জন্য। বস্ত্র আবিষ্কার করার মাধ্য়মে মানুষ এখন নিজেকে সভ্য গড়ে তুলেছে। সর্বত্র বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য।    

রচনার বিষয়: দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

বিজ্ঞানের কুপ্রভাব

বিজ্ঞানের আলোয় যেমন আমরা আলোকিত হয়েছি তেমনি বিজ্ঞানের অন্ধকার দিকও রয়েছে। যে অন্ধকার আমাদের প্রতিনিয়ত ক্ষতি করে চলেছে। বিজ্ঞানের ব্যবহারে মানুষের পরিশ্রম লাগব হওয়ায় শরীরে বাসা বাঁধছে বিভিন্ন রোগ। শরীর হয়ে উঠছে মেদবহুল। মানুষ পরিণত হয়েছে যন্ত্রে। 

মানুষ যন্ত্র কে নিয়ন্ত্রণ করছে না যেন যন্ত্র মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করছে। যানবাহনের ধোঁয়া বায়ু দূষিত করছে। কলকারখানার বজ্র পদার্থ নদী, জলাশয় পড়ে পানীয় জলকে দূষিত করছে। ফসলে ক্ষতিকর রাসায়নিক সার, কীটনাশক এর ব্যবহার খাদ্যের পুষ্টিগুণ কমিয়ে দিচ্ছে। 

গাছপালা কেটে ঘরবাড়ি কলকারখানা বানাচ্ছে যা আমাদের মাটিকে আলগা করে দিচ্ছে এতে বর্ষাকালে বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে ঘরবাড়ি এবং অক্সিজেনের ঘাটতি হচ্ছে। যা একসময় জীবকুলকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ইন্টারনেটের ব্যবহারে পশু পাখির ক্ষতি হচ্ছে। কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের ব্যবহারে মানুষের মধ্যে সম্পর্কের মায়া-মমতা সম্মান কমে যাচ্ছে। বন্দুক- বোমা মানুষের মধ্যে হিংসার প্রতিযোগিতা করাচ্ছে।                 

উপসংহার

বিজ্ঞানের সূর্যোদয়ের জীবন নতুন ইতিহাস লিখছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের কুপ্রভাব থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে ব্যাটারি চালিত যানবাহন বেরিয়েছে। দূষণ রোধে জলবিদ্যুৎ, সূর্যের আলো, বায়ুর,ব্যবহার আমরা করছি বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে।

গ্রীন হাউসের মাধ্যমে আমরা গাছপালা সংরক্ষণ করছি। কিন্তু এই সমস্ত ব্যবস্থার সাথে সাথে আরো উন্নত মানের ব্যবস্থা আনতে হবে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে। মানব জাতিকে নিজের সভ্যতা ও পৃথিবীকে বাঁচাতে বিজ্ঞানের কুপ্রভাব কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরো পরিবেশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

________________________

রচনাটির লেখিকারিয়া দাস। (প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান রচনা)

Next:

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা PDF

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান বা প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান রচনাটির pdf টি নিচে দেওয়া হলে এখান থেকে তোমরা সংগ্রহ করো।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনাটি ২০২৪ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তোমরাই রচনাটি ভালো করে মুখস্ত করবে। রচনাটি তোমাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্য অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবে।

অন্যান্য রচনা এবং পরীক্ষার সাজেশন পেতে আমাদের whatsapp group জয়েন করতে পারেন।

Leave a Comment