বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য – বিভক্তি কি? অনুসর্গ কি?

বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য: বাংলা ব্যাকরণে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলির মধ্যে একটি হল বিভক্তি। এই বিভক্তি ধাতুর সঙ্গে আবার কখনো শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি পদের সাথে অপর একটি পদের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপন করে এবং বাক্যটিকে সুসজ্জিত করে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অনুসর্গ, এটি বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে স্বাধীন ভাবে বসে বাক্যের অর্থ প্রকাশ করে। 

এগুলো বাংলা ব্যাকরণে বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আসুন তাহলে জেনে নিই বিভক্তি আসলে কি? বিভক্তি কাকে বলে? অনুসর্গ কাকে বলে? বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য কি?

বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য

বিভক্তি ও অনুসর্গের বিভিন্ন পার্থক্য গুলি নিচে টেবিলে উল্লেখ করা হলো। তবে বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে একটি প্রধান পার্থক্য হল বিভক্তি কোন পদ নয় এটি একটি বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি অপরদিকে অনুসর্গ একটি অব্যয় পদ। বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য গুলি হলো-

বিভক্তিঅনুসর্গ
বিভক্তির নিজস্ব অর্থ নেই। যেমন- তে, এ, য়, র প্রভৃতি।অনুসর্গের নিজস্ব অর্থ আছে। যেমন- দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক প্রভৃতি।
বিভক্তি ক্রিয়ার কালকে চিহ্নিত করে।অনুসর্গ ক্রিয়ার কাল কে চিহ্নিত করে না।
বিভক্তি কোন পদ নয়।অনুসর্গ একটি অব্য়য় পদ।
বিভক্তি শব্দ ও ধাতু উভয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।অনুসর্গ শুধুমাত্র পদের পরে বসে, ধাতুর পরে বসে না।
বিভক্তির অপর নাম হল বিভাগ বা ভাগ।অনুসর্গের অপর নাম হল কর্ম প্রবচনীয়।।
বিভক্তি একা একা বসে না। ইহা শব্দ কিংবা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বসে অর্থাৎ বিভক্তি পরাধীন। অনুসর্গ স্বাধীন, অর্থাৎ অনুসর্গ বাক্যে শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয় না, আলাদা বসে।
বিভক্তি সর্বদা ধাতু বা শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যে অবস্থান করে। যেমন- মা শিশুকে চাঁদ দেখায়।অনুসর্গ বাক্যে বিশেষ্য, সর্বনামের পরে বা আগে স্বাধীনভাবে অবস্থান করে। যেমন- তোমার দ্বারা বইটি লেখা হবে, বিনা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে।
যে সমস্ত বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি শব্দ বা ধাতুর শেষে যুক্ত হয়ে শব্দ বা ধাতুটিকে বাক্যে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে, পাশাপাশি দুটি পদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে বাক্যটিকে সুসজ্জিত করে তোলে এবং যথাযথ অর্থ প্রকাশ করে তাকে বিভক্তি বলে।যেসব অব্যয়পদ বিশেষ্য বা সর্বনামের পরে, কখনো কখনো স্বাধীনভাবে আবার কখনো কখনো শব্দ বিভক্তির মত বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশ করে, তাকে অনুসর্গ বলে।
অনুসর্গের উদাহরণ হলো এ, তে, য়, র, এর, র, কে ইত্যাদি।অনুসর্গের উদাহরণ হলো দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, থেকে, হইতে, বিনা প্রভৃতি।

বিভক্তি কি- বিভক্তি কাকে বলে? 

বিভক্তির অপর নাম হল বিভাগ। বাংলা ব্যাকরণে এমন কিছু বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি রয়েছে যা নাম পদ কিংবা ক্রিয়া পদ বা ধাতুর সাথে যুক্ত হয়ে বিশেষ শব্দ বা পদ তৈরি করে যা বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যটিকে সুসজ্জিত করে তোলে এবং দুটি পদের মধ্যে সম্পর্ক বা অন্বয় স্থাপন করে অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন করতে সাহায্য করে। তাদের বিভক্তি বলে।

মূলত বিভক্তি হলো এমন কিছু বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি যা একটি পদের সঙ্গে অন্য পদের মধ্যে সম্বন্ধ সাধন করে। পাশাপাশি বাক্যের অর্থ প্রকাশেও বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। 

বিভক্তির প্রকারভেদ:

বাংলা ব্যাকরণে বিভক্তি সাধারণত দুই প্রকারের হয়। যথা- 

  1.  শব্দ বিভক্তি 
  2. ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি

নিচে শব্দ বিভক্তি এবং ধাতু বিভক্তি সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো:

শব্দ বিভক্তি:

যে সমস্ত বিভক্তি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যে ব্যবহৃত হয় এবং বাক্যের অর্থ প্রকাশ করে তাকে শব্দ বিভক্তি বলা হয়। শব্দ বিভক্তির উদাহরণ:

  • নদীতে নৌকা চলে, এখানে নদী+তে = নদীতে
  • পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়। এখানে পাগল  + এ= পাগলে এবং ছাগল + এ= ছাগলে
  • বাজারে আজ কত মানুষ। এখানে বাজার + এ = বাজারে। 
  • কাগজের পাতায় পাতায় আজ শুধু আজগুবি খবর।  এখানে কাগজ + এর = কাগজের পাতা + য় = পাতায়
  • উপরোক্ত উদাহরণ গুলিতে আমরা দেখলাম শব্দের সঙ্গে তে, এ ,এর , য় এগুলি যুক্ত হয়েছে। এগুলি হলো শব্দ বিভক্তি। শব্দ বিভক্তি সাত প্রকারের হয় যথা- প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া ,চতুর্থী, পঞ্চমী ,ষষ্ঠী ও সপ্তমী। 

ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি:

যে সকল বিভক্তি ক্রিয়াপদ কিংবা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যে ব্যবহৃত হয় এবং বাক্যের অর্থ প্রকাশ করে তাকে ক্রিয়া বিভক্তি বলা হয়।ক্রিয়া বিভক্তির অপর নাম হল ধাতু বিভক্তি। পড়ুন- সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তির যোগ্যতা?

ধাতু বিভক্তির উদাহরণ:

  • সে বই পড়ে। এখানে পড়ে + এ = পড়ে। 
  • আমি খেলা করি। এখানে কর + ই = করি। 
  • তিনি আজ কাজটি শেষ করবেন। কর + বেন = করবেন। 

উপরোক্ত উদাহরণ গুলিতে এ, ই, বেন এসবই হল ক্রিয়া বিভক্তি বা ধাতু বিভক্তি। 

বিভক্তির বৈশিষ্ট্য:

বিভক্তির বৈশিষ্ট্য গুলি হল:

  1. বিভক্তি অর্থ হল বিভাগ বা ভাগ। 
  2. ইহা ধাতু বা শব্দের পরে যুক্ত হয়ে বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশ করে। 
  3. বিভক্তি ক্রিয়ার কাল নির্ণয়ে সাহায্য করে। 
  4. বিভক্তি কারক নির্ণয় করে। 
  5. বিভক্তি বাক্যে স্বাধীন ভাবে অবস্থান করে না। 
  6. শব্দ কিংবা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যকে সুসজ্জিত করে তোলে। 
  7. দুটি পদের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপন করে।

বিভক্তির প্রয়োজনীয়তা:

বাংলা ব্যাকরণে বিভক্তির প্রয়োগ প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়। বিভক্তি ছাড়া নাম পদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের সম্পর্ক স্থাপন হয় না। বাক্যকে সুসজ্জিত করে তুলতে বিভক্তি প্রয়োজন। বাক্যে অবস্থিত পদগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে বাক্যটির অর্থ প্রকাশে বিভক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাক্যের বিন্যাস গঠনে বিভক্তি সহায়তা করে। কারক নির্ণয়ে, ক্রিয়ার কাল নির্ণয়ে বিভক্তি সাহায্য করে। বাংলা ব্যাকরণে বিভক্তি সাত প্রকারের হয়। যথা- 

  1. প্রথমা বিভক্তি
  2. দ্বিতীয়া বিভক্তি
  3. তৃতীয়া বিভক্তি
  4. চতুর্থী বিভক্তি
  5. পঞ্চম বিভক্তি
  6. ষষ্ঠী বিভক্তি
  7. সপ্তমী বিভক্তি। 

নিচে এই বিভক্তি গুলির উদাহরণ দেওয়া হল।

প্রথমা বিভক্তি:

এক বচনের ক্ষেত্রে: শূন্য, অ, এ, য়, তে, এতে। বহু বচনের ক্ষেত্রে: রা, এরা, গুলি, গুলো, গণ। 

দ্বিতীয়া বিভক্তি:

একবচনের ক্ষেত্রে: শূন্য, অ, কে, রে, এরে, এ, তে।  বহুবচনের ক্ষেত্রে: দিগে, দিগকে, দিগেরে।

তৃতীয়া বিভক্তি:

একবচনের ক্ষেত্রে: শূন্য ,অ ,এতে, দ্বারা, দিয়া, দিয়ে ,কতৃক। বহুবচনের ক্ষেত্রে: দিগের দিয়া, দের দিয়া, দিগকে দ্বারা, দিগ কর্তৃক, গুলিকে দিয়ে, গুলো দিয়ে, গুলো কর্তৃক, দের দিয়ে। 

চতুর্থী বিভক্তি:

একবচনের ক্ষেত্রে: শূন্য ,অ,কে, রে ,এরে ,এ ,তে। বহুবচনের ক্ষেত্রে: দিগে, দিগকে, দিগেরে।

পঞ্চমী বিভক্তি:

এক বচনের ক্ষেত্রে: এ ,য়ে,য়,হইতে, থেকে, চেয়ে,হতে । বহু বচনের ক্ষেত্রে: দিগ হইতে, দের হইতে, দিগের চেয়ে, গুলি হইতে, গুলির চেয়ে, দের হতে, দের থেকে, দের চেয়ে। 

ষষ্ঠী বিভক্তি:

একবচনের ক্ষেত্রে: র, এর। বহুবচনের ক্ষেত্রে: দিগের, দের, গুলির, গণের, গুলোর । 

সপ্তমী বিভক্তি:

একবচনের ক্ষেত্রে: এ, য়, তে, এতে। বহু বচনের ক্ষেত্রে: দিগে, দিগতে, গুলিতে, গণে, গুলির মধ্যে, গুলোতে, গুলোর মধ্যে।

প্রশ্ন: – বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য

অনুসর্গ কি – অনুসর্গ কাকে বলে?

অনু এর অর্থ পরে কিংবা পশ্চাৎ এ এবং সর্গ কথাটির অর্থ হল অবস্থান। যে সমস্ত অব্যয় পদ, বিশেষ্য অথবা সর্বনামের পরে কখনো কখনো স্বাধীনভাবে আবার কখনো কখনো শব্দ বিভক্তি মত বাক্য ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশ করে, তাকে বাংলা ব্যাকরণে অনুসর্গ বলা হয়। 

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনুসর্গ পদের পূর্বে অবস্থান করে। যেমন: 

  • বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এখানে ‘বিনা’ একটি অনুসর্গ। ইহা পদের আগে অবস্থান করছে। 
  • আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছে। এখানে ‘থেকে ‘হল একটি অনুসর্গ। 
  • রিমির চেয়ে টিনা বেশি মেধাবী। এখানে ‘চেয়ে’ হল একটি অনুসর্গ। 
  • বিদ্যা অপেক্ষা বুদ্ধি বড়। এখানে ‘অপেক্ষা’ হল একটি অনুসর্গ। 

অনুসর্গের প্রকারভেদ:

বাংলা ব্যাকরণে অনুসর্গ প্রধানত দুই প্রকারের হয়। যথা:

  1. শব্দজাত অনুসর্গ। 
  2. ক্রিয়াজাত অনুসর্গ

শব্দজাত অনুসর্গ: 

যে সকল অনুসর্গ ক্রিয়া পদ ব্যতীত অন্য পদগুলি থেকে উৎপন্ন হয় তাকে শব্দজাত অনুসর্গ বলে। উদাহরণস্বরূপ: দিকে, প্রতি, নিকট, তরে, বিনা, সহিত, নিমিত্ত, জন্য, সদৃশ, ছাড়া, সম্মুখে প্রভৃতি। 

ক্রিয়াজাত অনুসর্গ:

যে সকল অনুসর্গ ক্রিয়াপদ থেকে উৎপন্ন হয় তাদের ক্রিয়াজাত অনুসর্গ বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ: করে, ধরে, করিয়া, ধরিয়া, বলিয়া, বলে প্রভৃতি। 

অনুসর্গের বৈশিষ্ট্যাবলী:

অনুসর্গের বৈশিষ্ট্য় গুলি হলো-

  1. অনুসর্গ একটি অব্যয় পদ এবং অনুসর্গের নিজস্ব অর্থ আছে। 
  2. অনুসর্গ সাধারণত শব্দের পরে বসে সংশ্লিষ্ট শব্দের সঙ্গে পরবর্তী শব্দের অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে। 
  3. বিভক্তি দিয়ে যেমন কারক চেনা যায় তেমন অনুসর্গ দিয়েও কারক চেনা যায়। অপাদান কারক, নিমিত্ত কারক এবং অধিকরণ কারক- দের অনুসর্গ দ্বারা চিহ্নিত করা যায়। 
  4. অনুসর্গের পূর্বপদটি বিশেষ্য হলে সেটি বিভক্তির সঙ্গে যুক্ত হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। কিন্তু যদি অনুসর্গের পূর্বপদটি সর্বনাম হয় তবে অবশ্যই তা বিভক্তিযুক্ত হবে।
  5. অনুসর্গ অনেক ক্ষেত্রে বিভক্তির মতো কাজ করে থাকে। 
  6. কিছু কিছু অনুসর্গ  আবার শব্দ বিভক্তির মত কারক নির্ণয়েও সাহায্য করে।  এগুলি হল হইতে , হতে, থেকে, চেয়ে, দ্বারা, দিয়া, দিয়ে, কর্তৃক প্রভৃতি। 
  7. অনুসর্গের ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হয়, কখনো সাধু আবার কখনো চলিত ভাষায় হতে পারে। 
  8. অনুসর্গ সাধারণত শব্দের পরে বসে। তবে কখনো কখনো শব্দের প্রথমেও বসে থাকে। এটি একটি ব্যতিক্রম।
  9. অনেকসময় বাক্যে পদের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হওয়ার পরেও কখনো কখনো অনুসর্গ যুক্ত হয়ে থাকে । 
  10. যেমন- তিনি হাতে করে মিষ্টি এনেছেন। এখানে হাত এর সঙ্গে ‘র’ বিভক্তি যুক্ত হওয়ার পর ‘করে’ অনুসর্গ যোগ হয়েছে।

নিচে বাংলা অনুসর্গের একটি তালিকা দেওয়া হল:

বাংলা অনুসর্গের তালিকা :

প্রতি,বিনা, বিহনে, সহ ,ওপর, অবধি, হেতু, মাঝে, অপেক্ষা, ভিন্ন, ব্যতীত ,জন্যে, ,পর্যন্ত, সহকারে ,তরে, পানে, মত, নিকটে, অধিক,পক্ষে ,দ্বারা ,দিয়ে, কর্তৃক, সঙ্গে, হইতে ,হতে, থেকে, ভিতর ইত্যাদি। 

এদের মধ্যে দ্বারা, দিয়া, দিয়ে, কতৃক এগুলি তৃতীয়া বিভক্তি রূপে। হইতে, হতে, চেয়ে এগুলি পঞ্চমী বিভক্তি রূপে এছাড়াও অপেক্ষা, মধ্যে প্রভৃতি অনুসর্গ গুলো, বিভক্তি রূপে ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন: – বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য

অনুসর্গের প্রয়োজনীয়তা:

 অনুসর্গ বাংলা ব্যাকরণে শব্দ বিভক্তি ন্যায় কাজ করে । বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে এই অনুসর্গ। নিমিত্ত কারক, অপাদান কারক, অধিকরণ কারক নির্ণয় অনুসর্গের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ভাষায় অভাব, তুলনা বোঝানোর ক্ষেত্রে অনুসর্গের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অর্থাৎ বাংলা ব্যাকরণে অনুসর্গের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

প্রকৃতিগত ভাবে অনুসর্গ তিন ভাগে বিভক্ত। যথা-

  1. বিশেষ্য অনুসর্গ
  2.  সর্বনাম অনুসর্গ
  3.  বিশেষণ অনুসর্গ

নীচে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল। 

বিশেষ্য অনুসর্গ:

যে অনুসর্গ বিশেষ্য পদের পরে বসে তাকে বিশেষ্য  অনুসর্গ বলে। যেমন: ঘাসের ওপর শিশির বিন্দু। এখানে ‘ঘাস’ হলো বিশেষ্য এবং ‘ওপর’ হলো একটি অনুসর্গ।

সর্বনাম অনুসর্গ:

যেসব অনুসর্গ সর্বনাম পদের পরে বসে তাদের সর্বনাম অনুসর্গ বলে। যেমন: সে আমার চেয়ে ছোট । এখানে ‘আমার’ হল সর্বনাম পদ এবং ‘চেয়ে’ হল অনুসর্গ। 

বিশেষণ অনুসর্গ: 

যেসব অনুসর্গ বিশেষণ পদের পরে বসে তাদের অনুসর্গ বলে। যেমন: খারাপের চেয়ে একটু ভালো। এখানে ‘খারাপ’ হলো একটি বিশেষণ পদ, চেয়ে  হলো অনুসর্গ।

উপরে বিভক্তি এবং অনুসর্গ সম্পর্কে সম্পূর্ণ আলোচনা করা হলো এবং বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা হয়েছে। আশা রাখি এই সম্পূর্ণ  অনুচ্ছেদ থেকে আপনারা বিভক্তি সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয়গুলি জানতে পারলেন। এবং অনুসর্গ কি তা জানতে পেরেছেন। পড়ুন- স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ

বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য গুলি রয়েছে এগুলি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। বাংলা ব্যাকরণের অনুসর্গ এবং বিভক্তি খুবই চেনা দুটি নাম। অনুসর্গ কথাটির অনু শব্দের অর্থ হলো পশ্চাৎ এবং স্বর্গ শব্দের অর্থ অবস্থান অর্থাৎ এই শব্দটি থেকে বোঝা যাচ্ছে এটি পদের পরে অবস্থান করে এবং বিভক্তি কথাটির অর্থ হল ভাগ বা বিভাগ। 

অনুসর্গ ও বিভক্তি দুটি সম্পূর্ণ আলাদা দুটি বিষয় কিন্তু এ দুটি ব্যাকরণে বহুল ব্যবহৃত এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের মধ্যে অনেক বৈসাদৃশ্য দেখা যায় যেমন- অনুসর্গ স্বাধীন ভাবে বসতে পারে, বিভক্তি স্বাধীন ভাবে বসতে পারে না। অনুসর্গ পদের সঙ্গে যুক্ত হয় তবে তা স্বাধীনভাবে অবস্থান করে। 

বিভক্তি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়। অর্থাৎ অনুসর্গ ও বিভক্তি আলাদাভাবে অর্থ প্রকাশ করে থাকে। তবে তাদের মধ্যে সাদৃশ্যও রয়েছে। যেমন বিভক্তি কারক নির্ণয়ের সাহায্য করে, তেমনি অনুসর্গও অনেক ক্ষেত্রে কারক নির্ণয়ে সাহায্য করে। অপাদান কারক, নিমিত্ত কারক, অধিকরণ কারক এগুলি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অনুসর্গের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। 

আবার দেখা যায় কোন কোন বাক্যে বিভক্তি এবং অনুসর্গ একই সঙ্গে অবস্থান করেছে। আশা রাখি আমাদের আলোচিত তথ্যগুলি থেকে আপনারা উপকৃত হয়েছেন এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে পরিচিত হয়েছেন।

বিভক্তি কত প্রকার?

বাংলা ব্যাকরণে শব্দ বিভক্তি সাত প্রকার। যথা- 
প্রথমা বিভক্তি, দ্বিতীয়া বিভক্তি, তৃতীয়া বিভক্তি, চতুর্থী বিভক্তি, পঞ্চম বিভক্তি, ষষ্ঠী বিভক্তি, সপ্তমী বিভক্তি। 

অনুসর্গের অপর নাম কি?

অনুসর্গের অপর নাম হল কর্ম প্রবচনীয়।

বিভক্তি অপর নাম কি?

বিভক্তির অপর নাম হল বিভাগ বা ভাগ।

Leave a Comment